আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ন্যান্সি নামুলিন্ডওয়া, বয়স ১৫। পিঠে বাঁধা পাঁচ মাসের এক শিশু। তাকে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলা করতে দেখা গেল উগান্ডার রাজধানী কাম্পালার এক শহরতলীতে।
যে কেউই ন্যান্সিকে দেখবে, ভাববে সে তার ছোট ভাই বা বোনকে পিঠে বেঁধে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলছে (এখানে বলে রাখা প্রয়োজন- ন্যান্সি একটি ছদ্মনাম, পরিচয় গোপন রাখার স্বার্থে এটি ব্যবহার করা হয়েছে)। বিষয়টি মোটেও তা নয়, বিষয়টি কি তার তার মুখ থেকেই শোনা যাক- ‘এটা আমার ছেলে। আমি ওর জন্ম দিয়েছি। আমি এক ব্যক্তির দ্বারা ধর্ষণের শিকার হই এবং অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ি। এ ঘটনা ঘটে যখন আমি একটু দূরের একটি কূপ থেকে পানি আনতে যাই। লোকটি পালিয়ে যায় এবং পরে তাকে আর আমাদের গ্রামে দেখা যায়নি।’
ন্যান্সি একা নয়। এমন হাজারো কন্যাশিশু (টিনএজ) অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছে এবং সন্তান জন্ম দিচ্ছে। এমন জটিল পরিস্থিতি ভীষণভাবে ভাবিয়ে তুলেছে দেশেটির কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকদের।
উগান্ডা সরকার জানাচ্ছে, ২০২০ থেকে ২০২১- এক বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৬ লাখ ৫০ হাজার কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে।
কাম্পালার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক রজার্স কাউলু বলেন, করোনাভাইরাসের সময় স্কুল বন্ধ থাকার কারণে কিশোরীদের এই সমস্যায় বেশি পড়তে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখন কিন্তু এর পরিমাণ কমে এসেছে, কেননা এখন তারা স্কুলে যাতায়াত করছে। তারা কর্মহীন ছিল বিধায় সহজেই যৌন কার্যকলাপে প্রলুব্ধ বা লিপ্ত হয়েছে।
উগান্ডার পূর্বঞ্চলীয় শহর লুকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা লিভিংস্টোন নেতিমা বলেন, গ্রামে বসবাবসকারী ১০০ জন কিশোরীর মধ্যে অন্তত ৩০ জন কোনো না-কোনোভাবে অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছে। পরিস্থিতি সত্যিই ভয়াবহ। ১৪ বছর বয়সী মেয়েরা সন্তান জন্ম দিচ্ছে। এটা অনেকটা ‘শিশুরা শিশু জন্ম দিচ্ছে’ অবস্থা।
বাচ্চারা সব জায়গায়ই অরক্ষিত। হোক সেটা বাসা। হোক সে বাসা শহরে বা গ্রামে। একমাত্র স্কুলেই তারা সুরক্ষিত থাকে। বলেন একজন বাবা, যারা দুটি কন্যাসন্তান আছে। তাদের একজনের বয়স ১৭, অন্যজনের ১৪। এরা দুজনই করোনাকালীন লকডাউনের সময় অন্তঃসত্ত্বা হয় এবং সন্তান জন্ম দেয়। ফিলমোন ওগওয়াং নামে ওই বাবা বলেন, যদি সরকার আবার স্কুল বন্ধ করে দেয়, তবে আমাদের সব মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যাবে। আমি সরকারকে অনুরোধ করব, তারা যেন স্কুল বন্ধ না করে। তাহলে আমাদের সব মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাবে।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি
বিএসডি/ এলএল