আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়েও কানাডায় প্রবেশ করতে পারেননি সদ্য বিদায়ী তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। জানা গেছে, কানাডায় মুরাদের প্রবেশ ঠেকাতে ১৭১টি ইমেইল করা হয় দেশটির ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সিতে।
কানাডায় প্রবেশে সদ্য পদ হারানো এই রাজনীতিক কেন ব্যর্থ হয়েছেন সে প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এ তথ্য দিয়েছেন কানাডা প্রবাসী ও ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির গবেষক মঞ্জুরে খোদা টরিক।
গত সেপ্টেম্বরেই কানাডায় গিয়েছিলেন মুরাদ হাসান। অথচ তিন মাসের ব্যবধানে ঘটনার চিত্রই পাল্টে গেল।
মুরাদ হাসানকে কেন আটকে দিল বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি? এ প্রশ্নের জবাবে গবেষক মঞ্জুরে খোদা টরিক জানান, কানাডায় যাতে মুরাদকে ঢুকতে দেওয়া না হয়, সে জন্য প্রবাসীদের একটি অংশ সক্রিয় ছিল আগে থেকেই। তাকে রুখতে এজেন্সি বরাবর ১৭১টি ইমেইল করেছে এসব সংগঠন। টরিখের সংগঠনটিও তাদের অন্যতম। তিনি ‘লুটেরা বিরোধী মঞ্চ’ নামের সংগঠনটি সংগঠক।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে মঞ্জুরে খোদা টরিক বলেন, ‘মুরাদ হাসানের কানাডা আসার খবরে আমরা এখানে কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির ওয়েবসাইটে গিয়ে ইমেইল করি। বাংলাদেশে মুরাদ হাসানের অপকীর্তির কথা বিস্তারিত লিখি। এর সঙ্গে বিভিন্ন সংবাদ ও মুরাদের ভিডিও ক্লিপ জুড়ে দিই। শুনেছি আমাদের মতো এমন ১৭১ ইমেইল নাকি গেছে এজেন্সিতে। এখানে কর্মরত দুই বাংলাদেশি সাংবাদিক এ তথ্য জানিয়েছে আমাদের। আমাদের বিশ্বাস, এসব ইমেইলকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে কানাডা প্রশাসন। মুরাদকে কানাডায় ঢুকতে না দেওয়ার ব্যাপারে এটি কাজে দিয়েছে।’
টরিখ আরো জানান, কানাডায় সব কিছুই খুব নিয়মতান্ত্রিক। অনিয়মের দেখা মিলবে না এ দেশে। ডা. মুরাদের বিষয়েও হয়তো কোনো অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে এজেন্সি।
অনিয়ম প্রশ্নে ঢাকায় কানাডীয় হাইকমিশন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে — করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে যেসব কাগজপত্র থাকা প্রয়োজন ছিল, তা না থাকায় মুরাদ হাসানকে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়।
বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কানাডা বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদে মুরাদকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। পরে তাকে মধ্যপ্রচ্যের একটি দেশের বিমানে তুলে দেওয়া হয় বলে জানা যায়। বিপুলসংখ্যক কানাডিয়ান নাগরিক কানাডায় তার প্রবেশের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন বলেও তাকে জানানো হয়।
এদিকে মুরাদকে টরেন্টো বিমানবন্দরে আটকে দেওয়ার বিষয়ে কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এখনও কিছুই জানায়নি বলে তথ্য দিয়েছেন কানাডায় অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনার খলীলুর রহমান।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ থাকে। যদি বাংলাদেশের কোনো নাগরিককে কানাডায় প্রবেশে তারা বাধা দেয়, এমপি হোক বা সাধারণ নাগরিক হোক অর্থাৎ যে কোনো ব্যাপারে কোনো ঝামেলা হলে তারা জানায় আমাদের। কিন্তু মুরাদ হাসানের ব্যাপারে আমাদের কিছু জানায়নি তারা।’
কানাডায় ঢুকতে না পেরে রোববার সকাল থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আছেন মুরাদ।
বিমানবন্দরে দায়িত্বরত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শনিবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডা. মুরাদ হাসান কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়ে কানাডায় রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু যেতে পারেননি। আমাদের কাছে খবর আছে তিনি দুবাইয়ে আছেন। কাল দুবাই থেকে দেশে ফিরে আসার কথা। তার দুবাইয়ের ভিসাও নেই, সে কারণে সেখানে থাকতে পারছেন না। আমি শুনেছি তিনি চলে আসছেন দেশে।’
এদিকে জানা গেছে, কানাডার পর দুবাইয়ে ঢুকতে চেয়েও ব্যর্থ হওয়া সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আজ বিকেলেই দেশে ফিরছেন। বর্তমানে তিনি দুবাই বিমানবন্দরে আছেন।
দুবাই বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল সূত্র গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, বনানীর ডানা এভিয়েশন লিমিটেডের মাধ্যমে এমিরেটস এয়ারলাইন্সে দেশে ফেরার টিকিট চূড়ান্ত করেছেন ডা. মুরাদ হাসান। এমিরেটসের ইকে-৫৮৬ নম্বর ফ্লাইটটি বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। ফ্লাইটের ফার্স্ট ক্লাস ক্যাটাগরির টিকেট কেটেছেন মুরাদ। দুপুরে করোনা টেস্টের নমুনা দিয়ে দুবাই বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩-এ এমিরেটসের লাউঞ্জে অবস্থান করছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত শোভন, বির্তকিত মন্তব্যসহ অডিও কেলেঙ্কারির ঘটনায় তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ হারিয়ে বৃহস্পতিবার দেশ ছাড়েন জামালপুরের এমপি মুরাদ।
আমিরাতের একটি ফ্লাইটে স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর ১টা ৩১ মিনিটে টরন্টো পিয়ারসন্স আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিমানবন্দর থেকেই তাকে ফেরত পাঠান কানাডা ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির কর্মকর্তারা।
বিএসডি/ এলএল