নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভারতের আসাম প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর মাইকেল কিনের নামেই ১৯৩৩ সালে নির্মিত হয় ১ হাজার ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ১৮ ফুট প্রস্থের কিনব্রিজ। ১৯৩৬ সালে এটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সেই ব্রিজ সিলেট অঞ্চলেও অন্যতম ঐতিহ্যের স্মারক। কিন্তু অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড ম্লান করে দিয়েছে ব্রিজটির সৌন্দর্য। যে সিটি করপোরেশন দেখভাল করবে, উল্টো নিজেদের ময়লার গাড়িও দাঁড় করিয়ে রাখছে ব্রিজের নিচে।
নগরের কিনব্রিজ ঘেঁষা সিলেট সার্কিট হাউজের অবস্থান। মন্ত্রী এমপি থেকে শুরু করে আমলারা সিলেট এলেই সার্কিট হাউজে অবস্থান করেন। অথচ তাদের কারও চোখেও এই অব্যবস্থাপনাটি পড়ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তার দুই পাশে ট্রাক রাখায় গাড়ি চলাচলের পথ অনেকটা সংকুচিত হয়ে পড়ে। কিনব্রিজ এলাকার পাশের কালীঘাট এলাকায় নগরের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার। প্রতিদিন রাতে এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকভর্তি মালামাল আসে। রাতভর সেসব মালামাল ট্রাক থেকে নামানো হয়। অনেক ট্রাক ভোরের দিকে আসায় সকালেও মালামাল নামে। দিনে নগরে ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ থাকায় এসব ট্রাক মাল নামানো শেষে সেখানেই থেকে যায়। আর এক সময় কালীঘাটের সেই ট্রাকের সারি কিনব্রিজ পেরিয়ে সারদাহল থেকে নিয়ে কোতোয়ালি থানার সামনে পর্যন্ত গড়ায়। অনেক সময় যানজট লেগে যায়। আর একবার যানজট লাগলে তা কয়েক ঘণ্টা অব্যাহত থাকে।
সিলেটে ঘুরতে আসা সাহিদা খানম বেশ আগ্রহ নিয়ে কিনব্রিজ দেখতে গিয়েছিলেন। সারিবদ্ধ ট্রাক দেখে তিনি বেশ হতাশ। তিনি বলেন, ‘দেখে মনে হয় এই শহরের কোনো অভিভাবক নেই।’
সিলেট ট্যুরিস্ট ক্লাবের সভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন বলেন, ‘কিনব্রিজ সিলেটের ঐতিহ্যের মধ্যে অন্যতম। সুরমা নদী পাশে থাকায় দিনভর এখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আড্ডা দিতে আসেন। তারা এসব দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যান।’
তিনি বলেন, একটা সময় সন্ধ্যার পর সুরমার তীরে বসলে মন ভালো হয়ে যেতো। এখন তার উল্টোটা হচ্ছে। ট্রাক সরাতে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
আরেক চালক আব্বাস আলীর দাবি, শুধু আমরা রাখি না। সিটি করপোরেশনের ট্রাকগুলোও এখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিধায়ক রায় চৌধুরী জানান, সিসিকের নিজস্ব কোনো পার্কিং এলাকা নেই। ফলে গাড়ি নদী তীরবর্তী এলাকায় পার্কিং করা হয়। পার্কিং প্লেসের জন্য একটি জায়গা অধিগ্রহণের পরিকল্পনা আছে, যেখানে গাড়ি মেরামতের ব্যবস্থাও থাকবে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি পাঠানো হবে। নিজস্ব পার্কিং প্লেস হয়ে গেলে নদী তীরবর্তী জঞ্জাল আর থাকবে না। ট্রাকস্ট্যান্ড সরাতে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনবেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে, মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের জানান, বিষয়টি নজরে রয়েছে। ট্রাক রাখার কারণে এখন সেখানে সুরমা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে মানুষজন কম আসছে। স্ট্যান্ড নিয়ে সিটি করপোরেশন ও প্রশাসন সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে মন্তব্য করেন তিনি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, ওদের জন্য আলাদা ট্রাক টার্মিনাল করা হয়েছে। কিন্তু তারা সেখানে যায় না। শিগগিরই অভিযান পরিচালনা হবে। কিনব্রিজের এমন অবস্থা থাকবে না।
অন্যদিকে, সিটি করপোরেশনের গাড়ি রাখার প্রসঙ্গে দৃষ্টিপাত করলে তিনি জানান, সেই গাড়িগুলোও পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বিএসডি /আইপি