নিজস্ব প্রতিবেদক:
খেলাফত মজলিস ২০ দলীয় জোট ছাড়ায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যেকোনো দলেরই জোট ছাড়ার অধিকার বা স্বাধীনতা রয়েছে।
তিনি বলেন, স্বতন্ত্র দল হিসেবে যেকোনো দল যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটা তাদের দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। খেলাফত মজলিস যদি মনে করে, তারা ২০ দলীয় জোটে থাকবে না, সেই স্বাধীনতা তাদের আছে।
দীর্ঘদিন ধরে ২০ দলীয় জোট নিষ্ক্রিয়- খেলাফত মজলিসের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, তারা তো জোটের অংশ। তাহলে তারা কেন কাজ করেনি। জোটে আমরাও (বিএনপি) একটি পার্টি, তারাও একটি পার্টি। এখানে সবারই কাজ করার অধিকার রয়েছে। নিষ্ক্রিয়তার কারণে তারা জোট ছাড়ছে, এটি কোনো কারণ হতে পারে না।
শুক্রবার দুপুরে দলটির কেন্দ্রীয় এবং জেলা পর্যায়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করে খেলাফত মজলিস। বৈঠকে প্রায় দুই শতাধিক সদস্য অংশ নেন। বৈঠক শেষে বিকেলে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং থেকে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, খেলাফত মজলিস একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতির প্রয়োজনে সদা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-সংগ্রামে খেলাফত মজলিস বিশ্বাসী।
একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন হিসেবে দীর্ঘ তিন দশকেরও অধিক সময় রাজনৈতিক অঙ্গনে দেশ, জাতি, ইসলাম ও জনগণের পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে। খেলাফত মজলিস মনে করে, এ দেশের প্রতিটি নাগরিকের রাজনৈতিক মতাদর্শ লালন-পালন করার অধিকার আছে, যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান স্বীকৃত।
তিনি বলেন, বিগত ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি খেলাফত মজলিসে শুরার অধিবেশনে বিশেষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, পরবর্তী সিদ্ধান্তের পূর্ব পর্যন্ত খেলাফত মজলিস জোটের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। সে অনুযায়ী দীর্ঘ দুই বছরের অধিক সময় ধরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
হেফাজতের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, রাজনৈতিক জোট ইস্যুকেন্দ্রিক গঠিত হয়। জোট স্থায়ী বিষয় নয়। খেলাফত মজলিস ২০ দলীয় জোটে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে আছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০ দলীয় জোটের দৃশ্যমান রাজনৈতিক তৎপরতা ও কর্মসূচি নেই।
২০১৮ সালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে ২০ দলীয় জোটকে কার্যত রাজনৈতিকভাবে অকার্যকর করা হয়। এমতাবস্থায় আদর্শিক, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় খেলাফত মজলিস একটি আদর্শিক রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে সক্রিয় স্বতন্ত্র, বৈশিষ্ট্য নিয়ে ময়দানে ভূমিকা রাখবে এবং এখন থেকে ২০ দলীয় জোটসহ সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী, নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মওদুদ উদ্দিন আহমেদ, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, আহমেদ আলি, অধ্যাপক আব্দুল হালিম ছাড়াও দলটির যুগ্ম-মহাসচিব সহ-সাংগঠনিকসহ জেলার নেতারা।
১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট নিয়ে চারদলীয় জোট গঠিত হয়। এরপর বিভিন্ন সময় জোটের পরিধি বাড়তে থাকে এবং তা ২০ দলীয় জোটে রূপ নেয়।
২০১৬ সালের ৭ জুন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যায় মুফতি ফজলুল হক আমিনীর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ঐক্যজোট। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর জোট ছাড়ে লেবার পার্টি। ২০১৯ সালের ৬ মে ২০ দল ছাড়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ। গত ১৪ জুলাই জোট ছেড়ে যায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম।
জোটের আরেক শরিক কল্যাণ পার্টিও জোট ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর দলের প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম এক অনুষ্ঠানে বলেন, প্রধান শরিক বিএনপি যদি জোটকে সক্রিয় করতে চায়, যদি অতীতের ভুলগুলো আত্মসমালোচনা করে পরিবেশ ভিন্ন করতে পারে, তাহলে আমরা একসঙ্গে পথ চলব। না হলে প্রয়োজনে আমরা নিশ্চিতভাবে গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের আন্দোলনে আলাদা ভূমিকা রাখব।
এদিকে, অলি আহমদের এলডিপিও জোটে থাকতে চায় কি না, তা নিয়েও রাজনীতি অঙ্গনে আলোচনা চলছে আছে প্রায় দুবছর ধরেই। ২০১৯ সালের জুনের শেষে অলি আহমদের নেতৃত্বে ২০ দলের কয়েকটি শরিক দল ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামে একটি মোর্চা গড়ে তোলে। তখন বিএনপির সঙ্গে জোটের অন্যান্য দলের নেতাদের দূরত্বের বিষয়টি কিছুটা সামনে আসে। যদিও মোর্চা খুব বেশি এগোয়নি।
বিভিন্ন সময় জোট ছাড়ার ঘোষণা এলেও, জোটে দলের সংখ্যায় পরিবর্তন আসেনি। কেননা, যখনই কোনো দল জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে, তখনই অন্য কারো নেতৃত্বে দলের একাংশ পৃথক নামে জোটে থেকে গেছে।
অন্যদিকে, বিএনপি এখন ২০ দলীয় জোট নিয়ে সামনের দিকে যেতে চাচ্ছে না বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর দেখা গেছে। এমনকি জোটের নেতৃত্বে থাকা দলটির ভেতরে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়ার দাবি জোড়ালো হয়েছে। সম্প্রতি দলের ধারাবাহিক বৈঠকে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে জানা গেছে। এখন শুধু চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মতামত শোনার অপেক্ষায় বিএনপি।