ধর্ম ডেস্ক,
আমল ও সওয়াবের গুরুত্ব মুমিনের জীবনে অপরিসীম। ঈমানের পর আমলের মাধ্যমেই পার্থক্য কে কার চেয়ে কতটা উত্তম। সহজে ও অল্প সময়ে বিপুল সওয়াব লাভের আমলের কথা বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আমলগুলো নিতান্ত সহজ, কিন্তু অজস্র পুণ্য ও অগণিত ফজিলতপূর্ণ।
পাঠকদের জেনে রাখার সুবিধার্থে এখানে আমরা ২০টি সহজ আমলের কথা উল্লেখ করছি। যেগুলো করলে আল্লাহ তাআলা অনেক সওয়াব দান করবেন।
আমল : ০১
মানুষের প্রয়োজন পূরণ করা, ‘যে ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূর্ণ করে দেন। যে ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের কোনো অসুবিধা (বিপদ) দূর করে দেয়— আলাহ এর বিনিময়ে কিয়ামাতের দিন তার কষ্ট ও বিপদের অংশ বিশেষ দূর করে দিবেন।’
আমল : ০২
জিকির : ‘সুবহানালা-হি ওয়াল হামদুলিল্লাহি, ওয়ালা ইলা-হা ইলালাহ-হু আলাহু আকবার’’ এই কালেমাগুলো বলা, সূর্য যে সমস্ত জিনিসের ওপর উদিত হয়, সেই সমুদয় জিনিসের অপেক্ষা অধিকতর প্রিয়।’ [মুসলিম]
আমল : ০৩
‘আল্লাহ কি তোমাদের জন্য জামাতে এশার নামাজ পড়া হজের সমান এবং ফজরের সালাত জামাতে পড়া ওমরাহর সমান করেননি’’ এবং ‘‘যে ফরজ সালাত জামাতে পড়ার জন্য হেঁটে যায়, তা হজের সমান এবং যে নফল সালাত পড়ার জন্য হেঁটে যায়, তার সওয়াব নফল ওমরাহর সমান।’’ (সহিহ আল জামি: ৬৪৩২)
আমল : ০৪
‘যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাতের সাথে পড়ে, তারপর সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত আলাহর জিকির করে, তারপর দুই রাকাত সালাত পড়ে, সে যেন হজ এবং ওমরাহর সওয়াব পূর্ণ করল। [রসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম একথাটি ৩বার জোড়ে জোড়ে পুনরাবৃত্তি করলেন।] [আত-তিরমিজি ‘‘সাহাবীরা বললেন, ‘‘ হে আল্লাহর রাসুল! ধনীরা তো আখিরাতে বেশি পুরস্কার পাবে, তারা হজ আদায় করে, আমরা পারিনা, তারা জিহাদ করে এবং আমরা পারিনা। মুহাম্মাদ (সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম) বললেন, ‘‘আমি কি তোমাদের এ রকম কিছুর কথা বলব না, যদি তোমরা এটি শক্ত করে ধরে রাখ, তাহলে তোমরা তাদেও মত সওয়াব অর্জন করতে পারবে। তাহল প্রত্যেক সালাতের পর আল্লাহু আকবার ৩৪ বার, সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার এবং আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার বলা।’’
আমল : ০৫
‘যখন কেউ তার ভাইয়ের জন্য দোয়া করে, তখন ফিরিশতারা বলেন,‘ আমিন, তোমার জন্যও তা।’’ [সহিহ আল-জামি: ২১৪৩]
আমল : ০৬
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, দুটি বাক্য এমন রয়েছে, যা বলা সহজ, আমলের পাল্লায় অনেক ভারী, আর আল্লাহর কাছেও অধিক পছন্দনীয়। সেটি হলো, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম।’ (বুখারি : ৬৪০৬)
আমল : ০৭
সদকায়ে জারিয়াহ
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন মানুষ মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়; কিন্তু তিনটি জিনিস বন্ধ হয় না- সদকায়ে জারিয়াহ, ওই ইলম, যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়; সুসন্তান, যে তার মৃত বাবার জন্য দোয়া করে। (তিরমিজি : ১৩৭৬)
আমল : ০৮
সুরা ইখলাছের ফজিলত
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা কি কেউ প্রতি রাতে কোরআন শরিফের এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতে অক্ষম? তাহলে সে প্রতি রাতে সুরা ইখলাছ পড়বে। তাহলে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াতের সওয়াব পাওয়া যাবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ২৩৫৫৪)
আমল : ০৯; গোপনে নফল পড়ার ফজিলত
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জনসম্মুখের তুলনায় লুকিয়ে নফল নামাজ পড়ার মধ্যে ২৫ গুণ বেশি সওয়াব।’
আমল : ১০; মানুষের উপকার করার ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজনে কিছুক্ষণ সময় দেওয়া আমার কাছে এক মাস মসজিদে ইতেকাফ করার চেয়েও বেশি পছন্দনীয়।’ (আল মু’জামুল কাবির : ১৩৬৪৬)
আমল : ১১
আমলের নিয়তেও সওয়াব মেলে : রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি রাতে শয়নকালে এই নিয়ত করে যে সে রাতে উঠে নামাজ পড়বে; কিন্তু প্রচণ্ড ঘুমের কারণে সকাল হয়ে যায়, তাহলে সে তার নিয়ত অনুযায়ী নামাজের সওয়াব পাবে। আর ঘুমটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য সদকাস্বরূপ হবে।’ (নাসায়ি : ১৭৮৭)
আমল : ১২; রোগী দেখার ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমান ভাইয়ের রোগের খোঁজখবর নেয়, আল্লাহ সত্তর হাজার ফেরেশতাকে তার মাগফিরাতের দোয়ায় নিযুক্ত করে দেন। সে দিনের যে সময়ই তা করবে, ফেরেশতারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করবে। আর রাতের যে সময়ই করবে, ফেরেশতারা ফজর পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ৯৫৫)
আমল : ১৩
বিশুদ্ধ নিয়ত
উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করিম (সা.) কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই সব আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যার নিয়ত সে করবে। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করবে তার হিজরত আল্লাহ ও তার রাসূলের জন্যই হবে। আর যে দুনিয়া লাভের জন্য কিংবা কোনো নারীকে বিয়ের উদ্দেশ্যে হিজরত করবে তার হিজরত উক্ত বিষয়ের জন্যই হবে, যার জন্য সে হিজরত করেছিল। -সহিহ বোখারি, হাদিস- ১; সহিহ মুসলিম হাদিস- ১৯০৭
আমল : ১৪
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যাক্তির সাথে রোজ কিয়ামতে আল্লাহ পাক কথা বলবেন না। তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না। তাদের কে পবিত্র করবেন না । আর তদের জন্য রয়েছে ভীষন আযাব। রেওয়ায়েতকারী বলেন তিনি এ আয়াতটি তিনবার পড়লেন । আবু যর রা: বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সঃ), তারা কারা? তিনি বললেন, তারা হল: যে ব্যাক্তি টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়ে , যে ব্যাক্তি দান করে খোটা দেয় এবং যে ব্যাক্তি মিথ্যা শপথ করে মাল বিক্রি করে। (মুসলিম : ১৯৫)
আমল : ১৫
নবী করিম (সা.) বলেছেন, কোনো সৎ কাজকেই কখনো তুচ্ছ জ্ঞান করবে না। যদিও তা হয় তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাত। -সহিহ মুসলিম কারণ এই ধরনের সহজ আমলের মধ্যেও অনেক সময় নিহিত থাকে অনেক প্রাপ্তি ও পুরষ্কার। হাদিস শরিফে এমন অনেক আমলের বর্ণনা পাওয়া যায়, যা করতে সহজ, কিন্তু এর বিশাল প্রাপ্তি ও পুরষ্কারের কথা নবী করিম (সা.) ঘোষণা করেছেন।
আমল : ১৬
আন-নওয়াস বিন সাম’আন (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন, ‘উত্তম চরিত্র হচ্ছে নেকী, আর গোনাহ্ তাকে বলে যা তোমার মনকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে এবং তা লোকে জানুক তা তুমি অপছন্দ কর।’ (মুসলিম : ২৫৫৩)
আমল : ১৭
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাতের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কোরবানি করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কোরবানি করল। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কোরবানি করল। পরে ইমাম যখন খুত্বা দেয়ার জন্য বের হন তখন ফেরেশতাগণ জিকির শ্রবণের জন্য উপস্থিত হয়ে থাকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮১)
আমল : ১৮
রাসুল (সা.) বলেন, ‘অন্ধকারের মধ্যে যাহারা মসজিদে বেশি বেশি যাতায়ত করে, কেয়ামতের দিনের জন্য তাহাদের পূর্ণ নূরের সুসংবাদ শুনাও।’
আমল : ১৯
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘(যখন) কোনো বান্দা অন্তরের ইখলাসের সহিত, লা ইলাহা ইল্লাল্লহ বলে, তখন এই কালেমার জন্য নিশ্চিতরূপে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। এমনকি এই কালেমা সোজা আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। অর্থাৎ সাথে সাথেই কবুল হয়ে যায়। তবে শর্ত হলো, যদি এই কালেমা পাঠকারী কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।’ (তিরমিজি)
আমল : ২০ ভালো কাজ মন্দ কাজকে মুছে দেয়
আবু জর জুনদুব বিন জুনাদাহ্ এবং আবু আবদুর রহমান মুআজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন- ‘তুমি যেখানে যে অবস্থায় থাক না কেন, আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেক মন্দ কাজের পর ভাল কাজ করো, যা তাকে মুছে দেবে; আর মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো।’ (তিরমিজি : ১৯৮৭)