নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নকশা অনুমোদনের সার্ভারে (ইসিপিএস) হ্যাকার বা অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে ঝুঁকিতে পড়ে যায় রাজউকের সম্পূর্ণ প্ল্যান অনুমোদন প্রক্রিয়া। কিছু সময়ের জন্য সম্পূর্ণ রূপে থমকে ছিল ভবন অনুমোদনের কাজ। রাজউকের অভ্যন্তরীণ প্ল্যান অনুমোদনের কাজও আটকে ছিল। এ সুযোগে অনুপ্রবেশকারীরা সিস্টেমে ঢুকে বেশ কয়েকটি ভবনের অনুমোদন কার্যক্রম পরিচালনা করে।
গত (১৯ মে) ইসিপিএস সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে মাত্র ১৭ মিনিটে একটি ভবনের অনুমোদন পাশের ঘটনাটি পরে নজরে আসে রাজউকের। জলাভূমি ও হাইট রেস্ট্রিকশন থাকা ভূমিতে ১৫ তলা বিশিষ্ট ১৮৫ ইউনিটের এই সুউচ্চ ভবনটির নকশা সকল বিধিকে পাশ কাটিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পাশ করিয়ে নেয় হ্যাকার বা অনুপ্রবেশকারীরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজউকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ ও প্রটোকল) আব্দুল্লাহ আল মারুফ জানান, পরবর্তীতে রাজউক ওই ঘটনা জানতে পারার পর প্রাথমিক তদন্তে একই উপায়ে আরও তিনটি ভবনের নকশা অনুমোদন শেষ পর্যায়ে প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় পায়। তাৎক্ষণিক সার্ভারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, রাজউকের পক্ষ থেকে মতিঝিল থানায় সেদিনই একটি জিডি দায়ের করা হয়। উক্ত পাশকৃত নকশার সূত্র ধরে রাবেয়া বারী নামক এক প্রকৌশলীর সন্ধান পায় রাজউক, যার স্বাক্ষর নকশাগুলোতে পাওয়া যায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে মতিঝিলের নীল নকশা নামক একটি কম্পিউটারের দোকানের এবং সেখানকার এক কর্মচারী স্বপনের নাম।
এরই প্রেক্ষিতে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনির হোসেন হাওলাদারের নেতৃত্বে একটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয় মতিঝিলস্থ নীল নকশা নামক দোকানটিতে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা কালে দোকানটির সঙ্গে অননুমোদিত নকশা অনুমোদনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।
একইসঙ্গে দোকানটির মালিক এনামুলের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে রাজউকের নির্ধারিত ফি পরিশোধের প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও দোকানের কয়েকটি কম্পিউটারে অবৈধ ভবনগুলোর নকশা পাওয়া যায়। যা থেকে দোকানের মালিক এনামুল ও কর্মচারী স্বপনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
রাজউকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ ও প্রটোকল) আব্দুল্লাহ আল মারুফ জানান, মোবাইল কোর্ট চলাকালীন তাদের কাওকেই পাওয়া না যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মচারীদের পুলিশের আওতায় নেওয়া হয়। এঘটনায় রাজউকের পক্ষ থেকে থানায় এজাহার দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে।
এ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের ঘটনা খুবই অনভিপ্রেত। কঠোর তদন্ত করে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে যেন এমন কোনো ঘটনা না ঘটে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুসারে ব্যবস্থা নিবে রাজউক। ইতিমধ্যে অবৈধভাবে অনুমোদন নেওয়া ভবনটির নকশা বাতিল করে মালিকপক্ষকে চিঠি প্রদান করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।