নিজস্ব প্রতিনিধি:
নিরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঙ্গা, হাঙ্গামার চেষ্টাকারীরা কোনো দলেও তো নয়ই বরং তারা মানুষ হতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।
মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর অফিস কক্ষে সম্প্রতি সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি এবং হতাহতদের পুনর্বাসন বিষয়ে আলোচনা সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, সভায় সাম্প্রতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত দেবালয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও হতাহতদের পনর্বাসন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয় যে মৌলবাদীদের দ্বারা সংগঠিত পূর্বপরিকল্পিত এই সহিংসতায় হিন্দু ধর্মীয় ব্যক্তিদের মনোবল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রথমে তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে যাতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মনোবল দ্রুত ফিরে আসে। এজন্য স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতারা, বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন ও নেতাদের উদ্যোগ নিতে হবে। সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি এবং হতাহতদের তালিকা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে।
তিনি জানান, তৃণমূল পর্যায়ে প্রশাসন রাজনৈতিক নেতারা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিষয়ে দ্রুত আলোচনা সভার আয়োজন করবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা দ্রুত বিচার আইনে বিচার করতে হবে। কেন্দ্রীভাবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট, কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন কমিটি, ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি, ইসকন, বিভিন্ন পূজা উদযাপন কমিটির প্রধান এবং বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা সভার আয়োজন করবেন।
ফরিদুল হক খান বলেন, কেউ যদি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, সে আমার দলের হোক, আর যেই হোক আমি মনে করি মানুষ হিসেবে তার রূপ না, তার রূপ হলো পশু সমতুল্য। যারা এসব কর্ম করেন তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সবার ঐক্যমত গ্রহণ করতে হবে এবং আগামী দিনে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শান্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া যারা এ অপকর্ম করেছেন তাদের শাস্তি এমন হওয়া উচিত যেন তাদের শাস্তি দেখে পরবর্তীকে কেউ এমন কাজ করার সাহস না পায়। কাউকে আর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হাঙ্গামা করার সুযোগ দেওয়া হবে না। দল ও প্রশাসন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারলে কেউ এ ধরনের কাজ করতে পারবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যারা দাঙ্গা, হাঙ্গামার চেষ্টা করে তারা কোনো দলের হতে পারে না, এমনকি তারা মানুষ হতে পারে না, তারা অমানুষ। আগামীতে যাতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারে সেই পরিকল্পনায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মধ্য দিয়ে হয়তো এসব কাজে তারা লিপ্ত হয়েছে। আমরা চাই বিচারটা যাতে ভিন্নখাতে প্রবাহিত না হয়। সঠিক পথে গিয়ে প্রকৃত ব্যক্তিকে দ্রুত বিচার আইনে আনা হয়।
‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা হাতে এসেছে। কিন্তু কেউ যেন বাদ না পড়ে। কেউ যাতে আড়ালে না থেকে যায়। সরকারি উদ্যোগে আমরা তাদের জন্য যদি করণীয় থাকে তা করার চেষ্টা করবো। যে তালিকা এসেছে সেখানে ত্রুটি আছে। প্রকৃত তালিকা নেবো।’
সংসদ সদস্য পঙ্গজ দেবনাথ বলেন, সভার অভিমত হচ্ছে দ্রুত বিচার করা। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে কত টাকা লাগতে পারে তা নির্ধারণ করা।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি নানাভাবে চেষ্টা করছে নির্বাচনের আগে যাতে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করা হয়, তারা ভীত হয়ে দেশ ত্যাগ করে। আমরা আজ দৃঢ় কণ্ঠে বলছি, কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, কোনো হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান তারা নিজের দেশ ছেড়ে কখনোই যাবে না। জাতির কাছে আহ্বান জানাচ্ছি- তারা যেন ভিত না হয়, সরকার কঠোর অবস্থান নিয়ে এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে ব্যবস্থা নেবে। এবং তাদের যে ক্ষতি হয়েছে প্রধানমন্ত্রী তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করবেন। তারা যেন সামন্য এই ঘটনার পরে যেন দেশ ত্যাগ করার মতো কোনো হতাশার মধ্যে না পড়ে। এ দেশ আমাদের সবার, সব বাধাবিপত্তি প্রতিহত করেই আমরা এদেশে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকবো।
এ সময় সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার ও সংসদ সদস্য মনোরঞ্জনশীল গোপাল উপস্থিত ছিলেন।
বিএসডি / আইকে