নাটোরে রাস্তার উন্নয়ন প্রকল্পে কোটি টাকা আত্মসাৎ ও কৃষকের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর রাজশাহী কার্যালয়ের একটি দল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছে। তারা নির্মাণাধীন রাস্তা ঘুরে দেখে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন এবং অভিযোগের সত্যতা যাচাই করেন।
জানা গেছে, নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বাস্তবায়নাধীন তমালতলা থেকে পকেটখালি পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান এ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করতে দখল করা হচ্ছে কৃষকদের ফসলি জমি।
স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রয়োজনীয় মাটি না কিনে জোরপূর্বক কেটে নিয়েছে রাস্তার পাশের ফসলি জমি থেকে। মাটি নেওয়ায় ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। একইসঙ্গে জমির মালিক অর্থ বঞ্চিত হচ্ছেন।
অসহায় কৃষকদের ঠকিয়ে এমন বেআইনী পদ্ধতিতে মাটি সংগ্রহের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা।
বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ১৭ কোটি ২০ লাখ ১৫ হাজার ৮৬১ টাকা। যার মধ্যে মাটি কাটা, পরিবহন ও ভরাটের জন্য বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ৮২ লাখ টাকা।
প্রকল্পটির কার্যাদেশ পেয়েছে যশোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘জাকাউল্লা অ্যান্ড ব্রাদার্স’। তবে বাস্তবে প্রকল্পের কাজ পরিচালনা করছে নাটোরের ‘আসিফ এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বরাদ্দের অর্থ বাঁচাতে কৃষকদের জমির মাটি নিয়েছে এবং প্রকল্পে নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জানিয়েছেন, স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং ঠিকাদার মিলে এই বেআইনি কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে নজরদারির অভাবে এমন ঘটনা ঘটছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সাব্বির হোসেন বলেন, আমাকে না জানিয়েই আমার জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। প্রথমদিকে দুই-একজন প্রতিবাদ করলেও কোনো লাভ হয়নি। তাই পরে আর কেউ বাধা দেয়নি।
দুদকের কর্মকর্তা তানভির আহম্মেদ সিদ্দিক জানান, অভিযানে আমরা কিছু অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা, নির্মাণে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের আলামত পাওয়া গেছে। বিষয়টি কমিশনে প্রতিবেদন আকারে প্রেরণ করা হবে।