নিজস্ব প্রতিবেদক:
জনপ্রিয় পানীয় কফির আবাদ হচ্ছে পাবনার চাটমোহরের সমতল ভূমিতে। বেশ কয়েক মাস আগে শখের বশে দুটি চারা গাছ এনে বাড়িতে রোপণ করেছিলেন পেশায় ঠিকাদার শুকুর আলী। সেই গাছ থেকে এখন কফি ফল পাচ্ছেন। তার বাড়ি চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামে। বর্তমানে তিনি কফি উৎপাদন করার পরও কফিগাছ থেকে কলম দিয়ে উৎপাদন করে গ্রামে এবং ঢাকায়ও রপ্তানি করছেন।
চাটমোহর কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে হরিপুর ইউনিয়নের বরুরিয়া গ্রামে ও মুলগ্রাম ইউনিয়নে দুটি প্রদর্শনী হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়েও চাটমোহরে কফি চাষ শুরু হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়।
ঠিকাদার শুকুর আলী জানান, বেশ কয়েক বছর আগে সৈয়দপুরের খ্রিস্টান মিশনারিতে গির্জা নির্মাণের কাজ করছিলাম। সেখানকার ইতালিয়ান মাদার ইতালি থেকে দুটি কফির চারা এনে আমাকে দেন। আমি সেটি আমার বাড়িতে রোপণ করি। তিন বছর পর থেকে আমি ফল পেতে শুরু করি। মাঘ মাসে গাছে ফুল ধরে। আট মাস পর পাকলে গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করি। প্রায় তিন বছর ধরে বাড়িতে অবস্থান করছি বিধায় এখন গাছের ভালো যত্ন করতে পারছি। কফির দানা থেকে এবং গাছের ডালে কলম দিয়ে চারা তৈরি করছি। ২০১৮ সালে ২০টি, ২০১৯ সালে ৬০টি এবং ২০২০ সালে ১৫০টি চারা উৎপাদন করতে পেরেছি। লাগানোর তিন বছর পর থেকেই কফিগাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা যায়। কিছু চারা ঢাকায় নিয়ে প্রতিটি এক হাজার টাকা করে বিক্রি করেছি। এলাকায় প্রতিটি চারা পাঁচ শ টাকায় বিক্রি করছি। ইতিমধ্যে এলাকার প্রায় ২০ জন আমার কাছ থেকে কফির চারা কিনে রোপণ করেছেন। আমার মনে হচ্ছে, আমাদের দেশের আবহাওয়া কফি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কেউ কফির বাগান করতে চাইলে আমি তাকে সহায়তা করছি।
তিনি আরো জানান, কফিগাছে থোকা থোকা সবুজ ছোট ছোট ফল ধরে। ফলগুলো পাকলে পাকা বড়ইয়ের রং ধারণ করে। সনাতন পদ্ধতিতে তিনি কফি ফল সংগ্রহ করে ওপরের পাতলা আবরণ ফেলে দিয়ে রোদে শুকিয়ে রাখেন। এরপর সেগুলো আগুনের তাপে ভেজে পিষে তৈরি করেন কফির গুঁড়া। নিজের পরিবারের পানীয়ের প্রয়োজন মেটানোর পর উদ্বৃত্ত কফি আত্মীয়-স্বজনকে উপহার দেন।
প্রকল্পের অধীনে কফি চাষ শুরু করেছেন চাটমোহরের বরুরিয়া গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন। তিনি জানান, এই প্রথম কফি চাষ করছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে চারা ও সার সরবরাহ করেছে। হলুদের জমির মধ্যে জায়গা ফাঁকা করে আপাতত চারা লাগিয়েছি। কেমন হবে, কিভাবে কফি সংগ্রহ করতে হয় এসব আমি জানি না। পরীক্ষামূলকভাবে কফির চাষ করছি।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ জানান, বাংলাদেশের মাটি কফি চাষের উপযোগী। ঝুরঝুরে, জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হালকা অম্লমাটিতে কফি ভালো জন্মে। এটি উঁচু মাটিতে ভালো হয়। কফির সঙ্গে আন্তঃফসল হিসেবে পেঁপে, আনারস, গোলমরিচ চাষ করা যায়। হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে কফি ভালো হয়। খুব বেশি পরিচর্যার দরকার হয় না। রৌদ্রময় স্থানে চাষ করলে সার ও সেচের দরকার হয়। কফির ফল সংগ্রহ থেকে পান করা পর্যন্ত অনেকগুলো ধাপ পেরোতে হয়। এখন পরীক্ষামূলকভাবে কফি চাষ হচ্ছে। ভালো ফলাফল পেলে অধিকসংখ্যক কৃষককে কফি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
বিএসডি/ এলএল