আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসকে সতর্ক করে বলেছেন, শনিবার দুপুর ১২টার মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি না দিলে গাজায় যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে যাবে এবং আবার তীব্র যুদ্ধ শুরু হবে। তিনি জানান, হামাসের জিম্মি মুক্তি স্থগিতের ঘোষণার পর ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজার ভেতরে ও চারপাশে সমবেত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
হামাস সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, তারা আরও জিম্মি মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে। এর জবাবে নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস যদি শনিবার দুপুর ১২টার মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি না দেয়, তাহলে যুদ্ধবিরতি শেষ হবে এবং হামাসের চূড়ান্ত পরাজয় না হওয়া পর্যন্ত তীব্র যুদ্ধ চলবে।
ইসরায়েলি মন্ত্রী মিরি রেগেভ এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছি: শনিবারের মধ্যে সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যে এই বিষয়ে বিভ্রান্তি দেখা গেছে। কেউ বলছেন, শনিবার তিনজন জিম্মি মুক্তি দিলেই যুদ্ধবিরতি চলতে পারে। আবার কেউ বলছেন, অবশিষ্ট ৭৬ জন জিম্মিকেই মুক্তি দিতে হবে।
হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ইসরায়েলই যেকোনও জটিলতা বা বিলম্বের জন্য দায়ী। হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল তিন সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে, যার মধ্যে মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত করাও অন্তর্ভুক্ত। ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামাসের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, শনিবারের মধ্যে সব জিম্মি মুক্তি না পেলে ইসরায়েলের উচিত চুক্তি বাতিল করে দেওয়া এবং যুদ্ধ শুরু করা। নেতানিয়াহু ট্রাম্পের এই দাবিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর দক্ষিণ কমান্ডের প্রস্তুতির মাত্রা বাড়ানো হয়েছে এবং অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। হামাস ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনাকেও প্রত্যাখ্যান করেছে, যেখানে গাজাকে মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়ারা হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। হামাস বলেছে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বর্ণবাদী এবং জাতিগত নির্মূলের আহ্বান।
গাজায় চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে মানবিক সংকট তীব্র হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজার ২১০ জন নিহত হয়েছেন। গাজার প্রায় ৭০ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে এবং স্বাস্থ্য, পানি, স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেছেন, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি বজায় রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এবং শনিবার জিম্মি মুক্তি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। তবে তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন।
গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তবে শনিবারের মধ্যে জিম্মি মুক্তি না হলে গাজায় আবারও যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।