লাইফস্টাইল ডেস্ক,
সব রোগেরই কমবেশি চিকিৎসা আছে। তবে কিছু কিছু রোগের নাম শুনলে আতঙ্ক এসে ভর করে। ক্যান্সার তেমনি এক রোগ যার চিকিৎসা ব্যবস্থা হাতের নাগালে এলেও আতঙ্কটা মোটেও কমেনি। চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে ক্যান্সার আক্রান্তরা অসুস্থ হয়েও অনেকটা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন। এর মূল কারণ হচ্ছে, ক্যান্সার নিয়ে অতিরিক্ত নেতিবাচক চিন্তাধারার অবকাশ এখন আর নেই।
তাই ক্যান্সার নিয়ে আতঙ্ক নয় বরং আমাদের এই রোগটি সম্পর্কে আরো বেশি সচেতন হওয়া উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসায় অনেক সুবিধা হয়। রোগ লক্ষণের দেখা দিলেই একটুও দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। তবেই রোগটির সঙ্গে সহজে লড়াই করা সম্ভব। তাহলে জেনে নেওয়া যাক ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো কী কী।
-
- শরীরের কোনো অংশ কারণ ছাড়াই ফুলে ওঠা। ফোলা অংশটা কোনো ফোঁড়া বা ওই জাতীয় কিছু নয়। টিউমারের মতো হতে পারে।
-
- বগল, গলা, কুঁচকিসহ শরীরের কোনো অংশের লিম্ফ গ্ল্যান্ড ফুলে ওঠা।
-
- দেহের কোনো অংশে ঘা হওয়ার পর চিকিৎসা করাচ্ছেন, কিন্তু ঘা পরিস্থিতি অবনতি হলে।
-
- মেনস্ট্রুয়েশনের সময় ছাড়াও অন্য সময়ে ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং হলে। এবং দুর্গন্ধ যুক্ত ভ্যাজাইনাল হোয়াইট ডিসচার্জ। স্তনে ব্যথাহীন মাংসপিণ্ড হয়েছে, জায়গাটা ফুলে রয়েছে।
-
- দীর্ঘদিন ধরে কাশি হয়েছে। চিকিৎসা করাচ্ছেন। ওষুধ খাওয়ার পরও যদি না কমে, তাহলে অবশ্যই সচেতন হবেন। বিশেষত ধূমপায়ীরা এই ধরনের লক্ষণকে কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করবেন না।
-
- দ্রুত ওজন কমছে। কেন ওজন কমছে, তার যুক্তিসঙ্গত কোনও উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না। পাশাপাশি বেশ দুর্বল লাগছে।
-
- নাক, কান, রেক্টামসহ শরীরের যেকোনো রন্ধ্রপথে রক্তপাত হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
-
- শিশুর রক্তশূন্যতা দেখা দিলে। এর ফলে শিশু দিনকে দিন ফ্যাকাসে হয়ে যেতে পারে। সঙ্গে যদি জ্বর থাকে তাহলে বিলম্ব না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
-
- বয়স্ক মানুষের হঠাৎ প্রাতঃকৃত্যের অভ্যাসে যদি পরিবতন আসে। টানা কিছুদিন লুজ মোশন হলে। তারপর যদি কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশন হয়, এমন লক্ষণেও সতর্ক হতে হবে।
-
- এছাড়া শরীরের যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন যা আগে কখনো ছিল না। হঠাৎ করে নজরে এলেো। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে না।এই পরিবর্তনের কারণ খুঁজতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ক্যান্সার চিকিৎসার প্রথম শর্তই হল দ্রুত রোগ চিহ্নিতকরণ। লক্ষণ দেখা মাত্রই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে ঠিক সময়ে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা করা যায়। ক্যান্সার রয়েছে কিনা নিশ্চিত করে বুঝতে বায়োপ্সি পরীক্ষা করা হয়। এছাড়াও প্রয়োজন মতো সিটি স্ক্যান, এমআরআই স্ক্যান ইত্যাদি টেস্ট করতে হতে পারে।
মনে রাখা প্রয়োজন
তবে একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন, লক্ষণগুলো দেখা দেওয়া মানেই ক্যান্সারই হয়েছে তেমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। এই উপসর্গ থেকে অন্য রোগও হওয়া সম্ভব। তবে ক্যান্সার আছে, না নেই সেটা জানতে যতো দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
যা যা করণীয়
অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে, কেন দ্রুততার সঙ্গে ক্যান্সার নির্ণয় করা অত্যন্ত জরুরি, আসলে ক্যান্সার রোগটিকে এক, দুই, তিন, চার-এই চারটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। এক ও দুই হল অসুখের প্রাথমিক পর্যায় বা আর্লি স্টেজ। তিন ও চার হলো রোগের গড়িয়ে যাওয়া পর্যায় বা অ্যাডভান্স স্টেজ। চিকিৎসার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, বর্তমানে প্রাথমিক স্তরে রোগ ধরা পড়লে বেশিরভাগ ক্যান্সারেরই চিকিৎসা করতে অনেক সুবিধে হয়। এই পর্যায়ে চিকিৎসার খরচও অনেকটা কম। রোগ হারিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও এই পর্যায়ের রোগীরই সব থেকে বেশি থাকে। অপরদিকে অ্যাডভান্স স্টেজে চিকিৎসা অনেক জটিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসা হয় দীর্ঘকালীন। চিকিৎসার খরচও এই পর্যায়ে অনেক বেশি হয়। তাই দ্রুত রোগ নির্ণয় করাটাই হলো বুদ্ধিমানের কাজ।
বিএসডি/এএ