নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯ জুলাই, শুক্রবার। এক বছর আগে ঠিক এই দিনে রাজপথে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েছিলেন সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে ন্যায়ের পক্ষে শিক্ষার্থীদের সহযোদ্ধা হতে গিয়েই প্রাণ দিতে হয়েছিল তাকে। তার স্মরণে রংপুরে পালিত হয়েছে দিনব্যাপি নানা কর্মসূচি।
শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক আবেগঘন পরিবেশে আয়োজন শুরু হয়। প্রবীণ শিল্পী নব নূর আলীর তুলির আঁচড়ে উন্মুক্ত ক্যানভাস উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে সূচনা হয় অনুষ্ঠানের। পরে সর্বস্তরের মানুষ সেই ক্যানভাসে অংশ নেন প্রতীকী প্রতিবাদের স্বাক্ষর আঁকেন।
বিকেল ৪টায় শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বের হয় ‘দেশমাতৃকার রক্তাক্ত আঁচল বহনকারী র্যালি’। এতে অংশ নেন শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিককর্মী, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ। র্যালির নেতৃত্ব দেন দীপা রানী দাস প্রিয়া।
সন্ধ্যা ৬টায় শহীদ মিনার এলাকায় প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় শ্রদ্ধাঞ্জলি পর্ব। সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হয় জাতীয় সংগীত ও রণসংগীত। এরপর, “আমাদের প্রিয়’র” কাছের মানুষরা স্মৃতিচারণ করেন তাহির জামান প্রিয়কে নিয়ে।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে তাহির জামান প্রিয়কে নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এই স্মরণ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন শহীদ মেরাজুল ইসলামের মা আম্বিয়া খাতুন, সাংস্কৃতিক ঐক্য পরিষদ রংপুরের আহ্বায়ক মাহমুদ উন নবী ডলার, সংগঠক ইমতিয়াজ আলম তাজ, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা তৌহিদুর রহমান, সাংস্কৃতিককর্মী নূর ই আজম দ্বীপু, জুলাইযোদ্ধা ইমরান হোসাইন, ওয়াসিফা জাফর অদ্রি, প্রত্যয়ী মিজান, খন্দকার নাহিদ হাসান, মাহাতাব হোসেন আবির, মোতাওয়াক্কীল বিল্লাহ শাহ ফকির, সাংস্কৃতিক সংগঠক মাহাবুবুল হাসনাত, সাংবাদিক ফরহাদুজ্জামান ফারুক ও সাংস্কৃতিককর্মী জিয়েনা ফেরদৌস মিতুল।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন জুলাইযোদ্ধা শাহারিয়া সিদ্দিকী এবং রাজনৈতিক কর্মী মেহেদী হাসান তরুণ।
আয়োজকরা বলেন, এই আয়োজন শুধু এক তরুণের মৃত্যু নয়, এটি একটি অবদমিত প্রজন্মের স্মরণ ও প্রতিরোধের বার্তা। তাহির জামান প্রিয় শুধু একজন ব্যক্তি ছিলেন না—তিনি ছিলেন সাহস, স্বপ্ন ও পরিবর্তনের প্রতীক।
প্রসঙ্গত, দ্য রিপোর্টের সাবেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর ছিলেন তাহির জামান প্রিয়। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে গত বছরের ১৯ জুলাই রাজধানীর গ্রিন রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ঘটনার এক দিন পর তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গ থেকে সংগ্রহ করে পরিবার। এরপর দিন ২১ জুলাই রংপুরে তাকে দাফন করা হয়। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ২৭ বছর ১২ দিন।
গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর প্রিয়’র মা সামসি আরা জামান কলি বাদী হয়ে ২১ আগস্ট নিউ মার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার (রমনা জোন) মোহাম্মদ আশরাফ ইমাম, ডিএমপির এডিসি (নিউমার্কেট জোন) হাফিজ আল আসাদ, ডিএমপির এডিসি (নিউমার্কেট জোন) মো. রেফাতুল ইসলাম রিফাত ও নিউমার্কেট থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া, এই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৪০ জন আসামি রয়েছেন।