আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-সমর্থিত রাষ্ট্রীয় অর্থবিল (সরকারি ব্যয় প্যাকেজ) মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে পাস করাতে ব্যর্থ হয়েছেন রিপাবলিকানরা। শাটডাউন এড়াতে আনা সংশোধিত বিলটিতে সমর্থন দিয়েছেন ১৭৪ আইনপ্রণেতা। আর বিরোধিতা করেছেন ২৩৫ জন।
বিলটি পাশে সংসদের নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন প্রয়োজন ছিল। এর আগে কংগ্রেস একটি দ্বি-দলীয় সমঝোতায় পৌঁছেছিল। কিন্তু সেটি প্রত্যাখ্যান করে নতুন বিল প্রণয়নের জন্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বিলিওনেয়ার ইলন মাস্ক রিপাবলিকানদের ওপর চাপ তৈরি করেন।
এই বিবাদ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। যার ফলে বড়দিনের ছুটির আগে সরকারি সেবাসমূহ বন্ধ কিংবা সীমিত হয়ে পড়তে পারে।
জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য একটি পরীক্ষা হয়ে দাঁড়াতে পারে এই নাটকীয় পরিস্থিতি। শাটডাউন এড়াতে ট্রাম্পের আহ্বান শুনে রিপাবলিকানরা যে নতুন বিল আনেন তাতে প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে ৩৮ রিপাবিলকানও সায় দেননি।
নতুন বিল পাশ করাতে সরকারের হাতে আছে আর মাত্র একটি দিন। প্ল্যান-এ ও প্ল্যান-বি বিফলে যাওয়ার পর নিম্নকক্ষের শীর্ষ রিপাবলিকান নেতা এবং হাউজ স্পিকার মাইক জনসনকে এই এক রাতের মধ্যেই তার প্ল্যান-সি হাজির করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। কোনও সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারলে সীমান্ত টহল থেকে শুরু করে ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস (জাতীয় উদ্যান সংস্থা) পর্যন্ত সব ধরনের সেবা বন্ধ হয়ে যাবে।
ফলে বড়দিন এবং ইংরেজি নববর্ষের ছুটির মুখে লাখ লাখ মার্কিনির দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে ফেডারেল গভর্নমেন্ট শাটডাউন। হুমকিতে পড়বে বিমানবন্দরের পরিচালন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আমেরিকান বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা দেখভাল করে ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা পরিবহন নিরাপত্তা সংস্থা। আর পরিচালনার দায়িত্ব ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্টেশন বা বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের।
শাটডাউনের মুখে পড়লে দুটি সংস্থাকেই তাদের কর্মীদের একাংশকে ছুটি দিয়ে দিতে হবে। ২০১৮-১৯ সালের ৩৫ দিনব্যাপী শাটডাউনের সময় কর্মীর অভাবে ধীরগতিতে কাজ চালাতে বাধ্য হয়েছিল বিমানবন্দরগুলো। এছাড়া ২০ লাখ সরকারি কর্মচারী এই ছুটির মৌসুমে বেতন থেকে বঞ্চিত হবেন।
• নাটের গুরু ইলন মাস্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পেছনে ইলন মাস্কের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বলা হয়ে থাকে। ব্যয় সংক্রান্ত বিল ইস্যুতে আবারও আলোচনায় এসেছে মাস্কের প্রভাব। ট্রাম্প ও মাস্কের তাগিদের কারণেই ঐকমত্যে পৌঁছানো প্রথম বিলটি খারিজ করেছিলেন রিপাবলিকানরা।
কিন্তু সংশোধন করে আনা দ্বিতীয় বিলটির বেলায় রক্ষণশীলদের অনেকে মাস্কদের কথা শোনেননি। বিপক্ষে পড়া ওই ৩৮ রিপাবলিকানের ভোটই ফলাফল নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখে। এই রাজনৈতিক নাটকীয়তা বিশৃঙ্খলা আর অনিশ্চয়তার স্বাদই দিলো আগামী দিনের শাসকদের।
অথচ সপ্তাহজুড়ে নাটকীয়তার কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিটির কোনও সরকারি পদও নেই। তার আছে কোটি কোটি ডলার, একটি সোশ্যাল মিডিয়া মেগাফোন (চোঙা) এবং শ্রোতা হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট শুধু নয় কংগ্রেসের রক্ষণশীলরাও।
বুধবার সকালে এই টেক টাইকুন তার মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে প্রথম বিলটির বিপক্ষে প্রচারণায় নেমে পড়েন। বছর দুয়েক আগে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে এক্স কেনেন মাস্ক। হাউজ স্পিকার মাইক জনসন মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত সরকারি খরচ মেটাতে একটা সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন। সেটির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন ইলন মাস্ক।
একের পর এক পোস্টে যেসব বক্তব্য তিনি উপস্থাপন করেছেন তার কোনও কোনোটির যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। এতে শেষ পর্যন্ত সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপকভাবে সক্রিয় ছিলেন শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। অনুদানও দিয়েছেন প্রায় ২০ কোটি ডলার। অবশ্য ট্রাম্প জেতার পরে মাস্কের সম্পদ বাড়ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।
বিজয়ী ভাষণে বিশেষভাবে মাস্কের কথা বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ভূঁয়সী প্রশংসাও করেন। এর আগে, ২০২২ সালে অবশ্য তিনি ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পতনের ইঙ্গিত দিয়ে মন্তব্য করেছিলেন ‘‘ট্রাম্পের টুপি খুলে ঝুলিয়ে রাখা এবং সূর্যাস্তের দিকে যাত্রা করার সময় এসেছে।’’
তবে সময় বদলেছে। প্রযুক্তি বিলিওনেয়ার থেকে ট্রাম্পের অন্যতম দৃশ্যমান এবং সুপরিচিত সমর্থক হিসাবে প্রকাশ্যে এসেছেন ইলন মাস্ক। চলতি বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করতে ‘আমেরিকা পিএসি’ নামে একটা রাজনৈতিক অ্যাকশন কমিটি গঠন করেছিলেন তিনি। এই নির্বাচনে সেখানে ২০ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছেন মাস্ক।
টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান এবং সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্সের (সাবেক টুইটারের) মালিক ইলন মাস্ক ভোটার রেজিস্ট্রেশন অভিযান (ভোটার নিবন্ধন অভিযান) চালু করেছিলেন। প্রচারের সমাপনী পর্বে এই অভিযানের আওতায় সুইং-স্টেটের যেকোনও একজন ভোটারকে প্রতিদিন ১০ লাখ ডলার উপহার দেওয়া হতো।
১৩ জুলাই পেনসিলভানিয়ার বাটলারে হত্যা প্রচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পকে প্রথম সমর্থন দেওয়ার পর থেকে, ইলন মাস্ক ট্রাম্পের প্রচারাভিযানের একটি অংশ হয়ে ওঠেন। যেখানে তিনি প্রায়ই সতর্কবার্তা দিয়ে আসছিলেন যে, শুধুমাত্র ট্রাম্পই আমেরিকার গণতন্ত্রকে বাঁচাতে পারেন।