কর্তৃপক্ষ বলছে, তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে বছরে অতিরিক্ত ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন। কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন এই টার্মিনালে থাকবে বিশ্বমানের সব সুযোগ-সুবিধা ও যাত্রীসেবা।
২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী এই টার্মিনালের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছিলেন। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বলছে, তৃতীয় এই টার্মিনালের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজই শেষ। টার্মিনালের পুরো কার্যক্রম আগামী বছরের শেষ দিকে চালানো সম্ভব হবে।
টার্মিনালটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ। বাকি তহবিলের জোগানদাতা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। টার্মিনালটির নকশা করেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ও ব্যস্ততম হিসেবে পরিচিত সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের নকশাকার রোহানি বাহারিন।
বেবিচক বলছে, বিশ্বমানের এই টার্মিনালে ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি রাখার সক্ষমতাসহ বহুতল গাড়ি পার্কিং তৈরি করা হচ্ছে। এই টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। এ ছাড়া তৃতীয় টার্মিনালে ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে এবং অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য চারটি পৃথক বেল্ট থাকবে।
দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনালে এখন প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার যাত্রী সেবা পাচ্ছেন। সেই হিসাবে বিমানবন্দরটি বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়। বেবিচকের তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে বছরে অতিরিক্ত ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
বেবিচক বলছে, বিশ্বমানের এই টার্মিনালে ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি রাখার সক্ষমতাসহ বহুতল গাড়ি পার্কিং তৈরি করা হচ্ছে। এই টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। এ ছাড়া তৃতীয় টার্মিনালে ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে এবং অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য চারটি পৃথক বেল্ট থাকবে। একটি করিডরের মাধ্যমে পুরোনো দুটি টার্মিনালের সঙ্গে নতুন টার্মিনালকে যুক্ত করা হবে।
ঢাকায় বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হলে যানজটের ভয়ে হাতে লম্বা সময় নিয়ে রওনা দিতে হয়। কর্তৃপক্ষ বলছে, তৃতীয় টার্মিনালে যেতে সেই ভোগান্তি আর পোহাতে হবে না। যানজট এড়ানোরও নানান অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। মেট্রোরেল ও উড়ালসড়কের কাজ এগিয়ে চলছে। এই সব কটি পথই ঠেকবে তৃতীয় টার্মিনালে।
নতুন টার্মিনালের সুযোগ–সুবিধা প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, নতুন টার্মিনালে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারবেন। বর্তমানে টার্মিনালের ব্যবস্থাপনা অনেকগুলো সনাতন পদ্ধতিতে চলে; কিন্তু নতুন জায়গায় সব হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে।
নতুন টার্মিনাল ভবনের বহির্গমন পথে ১০টি স্বয়ংক্রিয় ই-গেট থাকবে। যেসব যাত্রী অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে আসবেন, তাঁদের জন্য পাঁচটি ই-গেট থাকবে। পাশাপাশি থাকবে ১৭৭টি চেকইন কাউন্টার, ৬৪টি বহির্গমন ইমিগ্রেশন ডেস্ক এবং ৬৪টি আগমনী ইমিগ্রেশন ডেস্ক। যাত্রীদের তল্লাশির ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আসছে। বডি স্ক্যানার যন্ত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তল্লাশি চলবে।
তৃতীয় টার্মিনালে সময় কাটানোর জন্য মুভি লাউঞ্জ, ফুডকোর্ট, এয়ারলাইনস লাউঞ্জ, ডে-রুম ও ১৪টি স্পটে ডিউটি ফ্রি শপ থাকবে। যাত্রীদের নিতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, বাচ্চাদের খেলার জায়গা থাকছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টার্মিনালের পুরো কার্যক্রম চালু হতে কিছু সময় লাগলেও কিছু কিছু সুবিধা এখন থেকে ব্যবহার করা যাবে। যেমন অ্যাপ্রনে ৩৭টি এয়ারক্রাফট পার্ক করা যাবে। আমদানি ও রপ্তানি কার্গো টার্মিনালের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী মার্চ–এপ্রিলে তা চালু হতে পারে।
বেবিচক জানায়, নতুন টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে জাপান। তাদেরই এ কাজ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, নতুন টার্মিনালের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব জাপানকে দেওয়া হবে। তাদের দায়িত্বের মধ্যে থাকবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, কার্গো হ্যান্ডলিং।
তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শেষ হওয়ার আগে থেকেই বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশের আগ্রহ দেখিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন বিমান সংস্থা। ইতিমধ্যে কিছু আবেদনও জমা পড়েছে। এ বিষয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে জায়গার স্বল্পতার কারণে নতুন করে সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। তৃতীয় টার্মিনাল প্রস্তুত হলে ক্রমে ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ দেওয়া হবে।
বিএসডি/এসএস