শিক্ষা ডেস্ক:
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কাটার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনের স্থায়ী বরখাস্তের দাবিতে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা আবারোও কঠোর অন্দোলনে নেমেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আন্দোলনের তৃতীয় দিনে বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা।
রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। টানা এক ঘণ্টা মহাসড়কে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবস্থানকালে কোনো সহিংস ঘটনা বা যানবাহন ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি। তবে শাহজাদপুরের মহাসড়কের বিসিক মোড়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থানকালে পাবনা, কুষ্টিয়া, খুলনা, যশোর এবং সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, উত্তরাঞ্চল ও ঢাকাগামী শত শত যানবাহন দু’পাশে আটক পড়ে। এতে বিপাকে পড়েন শত শত যাত্রী। খবর পেয়ে পুলিশও ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। এ সময় শাহজাদপুরের ওসি সহিদ মাহমুদ খানকে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ঘণ্টাব্যাপী নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, মহাসড়ক অবরোধের আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শামিম হোসেন একাডেমিক ভবনের চার তলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের কারণে তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর আবার তিনি বিষপানে আত্মহননের চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবিদ হোসেন ও দ্বিতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী আমিনুর রহমান শিক্ষার্থীদের ভিড়ে ও হুড়োহুড়িতে পড়ে গিয়ে আহত হন। তাদেরকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এদিকে, শিক্ষার্থী শামিমের বিষপানে আত্মহননের চেষ্টার খবর পেয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সোহেল আহম্মেদ জানান, শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বিষপানের ঘটনার বিবরণ পেয়ে অসুস্থ্য শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ন্যূনতম ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থী শঙ্কামুক্ত কিনা তা বলা যাবে না।
এর আগে অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনের ঘটনার তদন্ত দলের প্রধান প্রভাষক লায়লা ফেরদৌস হিমেলসহ অন্যান্য শিক্ষকরা একাডেমিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এ সময় রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বার বার আলোচনা করতে এসেও ব্যর্থ হন।
রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও তদন্ত দলের প্রধান প্রভাষক লায়লা ফেরদৌস হিমেল বলেন. ‘আমরা প্রায় কুড়িজন শিক্ষক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। এক পর্যায়ে আমাদের সামনেই শামিম হোসেন একাডেমিক ভবনের চার তলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ২৫ সেপ্টেম্বর ১৪ শিক্ষার্থীর চুলকাটার দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরত্বপূর্ণ তিনটি পদ থেকে সরে আসেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত হন তিনি। তার স্থায়ী বরখাস্তের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আন্দোলন থেকে সাময়িক সরে আসেন শিক্ষার্থীরা। ঘটনার তদন্তও শেষ হয়েছে। প্রতিবেদন জমাও পড়েছে। কিন্তু শিক্ষক ফারাহানার স্থায়ী বরখাস্তের প্রক্রিয়াটি সিন্ডিকেট সভায় রহস্যজনক ঝুলে যায়। এরই প্রেক্ষিতে শুক্রবার রাত থেকে অনশনসহ ফের আন্দোলনে যান শিক্ষার্থীরা।
বিএসডি /আইপি