করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজের প্রায় ১৫ লাখ টিকার সংকট সহসাই কাটছে না। বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদিত টিকা কবে পাওয়া যাবে সেটিও নিশ্চিত নয়। বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড দিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে শুরু হয় গণটিকাদান। কিন্তু অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে গত মার্চে ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করলে সদস্যায় পড়ে বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অক্টোবরের আগে সেরামের টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। গতকাল ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীও সেরামের টিকা দেওয়ার নির্দিষ্ট সময় বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন।
চুক্তি সত্ত্বেও সেরাম টিকা দেওয়া বন্ধ করে দিলে টিকাদান অব্যাহত রাখতে চতুর্মুখী তৎপরতা শুরু করে ঢাকা। নতুন করে কেনার পাশাপাশি দেশে টিকা উৎপাদন করতেও চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিকার ঘাটতি পূরণে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর কাছে অনুরোধ করে চলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো রাষ্ট্রের তরফেই টিকা পাঠানোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার পাওয়া যায়নি। তবে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জুলাইয়ে চীনের কাছ থেকে টিকা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, এর আগে সংকটের মধ্যে টিকাদান অব্যাহত রাখতে চতুর্মুখী তৎপরতার অংশ হিসেবে চীনের সিনোফার্ম কোম্পানির কাছ থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ে চুক্তি চূড়ান্ত করে বাংলাদেশ। ক্রয় সম্পন্ন করার জন্য তিনটি ডকুমেন্টের সব সই করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো তাদের জবাব আসেনি। এর বাইরে চীনের আরেকটি কোম্পানি সিনোভ্যাকের সঙ্গেও আলোচনা শুরু করেছে সরকার। তবে এই আলোচনা কবে নাগাদ শেষ হবে, অর্থাৎ কবে টিকা কেনার চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। তা ছাড়া ৫০ লাখ ডোজ রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি টিকা কেনার বিষয়েও কয়েক দফা ডকুমেন্ট আদান-প্রদান হয়েছে এবং শিগগিরই চুক্তি সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। তবে কবে নাগাদ বাংলাদেশ টিকা পাবে সেটি নিশ্চিত নয়।
আশার দিক হচ্ছে- দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নিয়ে দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিদের জন্য এগিয়ে এসেছে বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্স। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বাধীন এই জোট থেকে ১০ লাখ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়ায় প্রতিশ্রুতি মিলেছে। তবে কবে নাগাদ এসব টিকা আসবে বা কোন দেশ থেকে সরবরাহ করা হবে, গতকাল পর্যন্ত তা নিশ্চিত করেনি কোভ্যাক্স।
চীনের সিনোফার্মের সঙ্গেও যৌথভাবে টিকা উৎপাদনের আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। খুব শিগরি এ সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে বলে জানা গেছে। রাশিয়া থেকেও এক কোটি টিকা কেনার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে সরকার। এ সপ্তাহেই আলোচনা শেষ করে জুলাইয়ে স্পুটনিক-ভি টিকার প্রথম চালান পেতে আগ্রহী ঢাকা। সব কিছু ঠিকমতো এগোলে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব টিকা দেশে আসবে। এ লক্ষ্যে স্পুটনিক-ভির উৎপাদক ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অব রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (সিআরডিআইএফ) সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সিনোফার্মের সঙ্গে আলোচনা আগেই শুরু হয়েছে। আশা করছি জুলাই মাসে চুক্তি স্বাক্ষর হবে। রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা দুই দফা হয়েছে। আমরা আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। ভারতের কাছ থেকে টিকা পাওয়ার বিষয় তিনি বলেন, অক্টোবরের পর তাদের টিকা পাওয়া যেতে পারে।