অর্থনীতি ডেস্ক:
শুল্কমুক্ত সুবিধায় কেনা মদ, সিগারেট ও মদ জাতীয় অন্যান্য পণ্যের অপব্যবহার বন্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করবে এনবিআর।
শুল্কমুক্ত সুবিধায় কেনা এসব পণ্যের অপব্যবহার বন্ধ করতে অটোমেটেডের আওতায় এসেছে ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যার হাউসগুলো। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত ‘ডিপ্লোমেটিক বন্ড অটোমেশন সিস্টেম’ প্রণয়ন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এনবিআরের কাস্টমস রফতানি ও বন্ড বিভাগের দ্বিতীয় সচিব মশিউর রহমান মণ্ডলের সই করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) এনবিআরের জনসংযোগ দফরত সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বাংলাদেশে অবস্থানরত ডিপ্লোমেটস ও প্রিভিলাইজড পার্সন শুল্ক-করমুক্তভাবে ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউস হতে আমদানিকৃত মদ, মদ জাতীয় পণ্য, সিগারেট ইত্যাদি ক্রয় করে থাকেন। ওই সকল কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই ডিপ্লোমেটিক বন্ড অটোমেশন সিস্টেম প্রণয়ন করেছে এনবিআর।
এনবিআরের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইস্যুকৃত ট্যাক্স একজামসন সার্টিফিকেট (টিইসি) ও ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের ইস্যুকৃত পাসবইয়ের বিপরীতে বাংলাদেশে অবস্থানরত ডিপ্লোমেটস ও প্রিভিলাইজড পার্সন শুল্ক-করমুক্তভাবে ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউস হতে আমদানিকৃত মদ, মদ জাতীয় পণ্য, সিগারেট ইত্যাদি ক্রয় করে থাকেন। তাই ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউসের কার্যক্রম ডিজিটাল প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা প্রদানের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও দ্রুততম সেবা প্রদান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
তাই ওই সেবা নিশ্চিত করতে এনবিআর একটি ডিপ্লোমেটিক বন্ড অটোমেশন সিস্টেম সফটওয়্যার প্রণয়ন করেছে। যা ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউসকে অনুসরণ করে কার্যক্রম পরিচালিত করবে।
একই সঙ্গে ওই আদেশ দ্বারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এনবিআর ও ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউসকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পৃথক পৃথক কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। যার মধ্যে রয়েছে-
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম
* বিদেশি কূটনীতিক ও সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের প্রাপ্যতার ভিত্তিতে চাহিদাকৃত পণ্য সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট তথ্য ডিপ্লোমেটিক বন্ড অটোমেশন সিস্টেমে আপলোড করবে এবং সিস্টেম থেকে প্রাপ্ত ইলেকট্রনিক স্বাক্ষরযুক্ত টিইসি স্টেকহোল্ডারদের জন্য প্রস্তুত করবে।
* বিদেশি কূটনীতিক ও সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের প্রাপ্যতা সংক্রান্ত নীতিগত কোনো পরিবর্তন হলে অথবা উক্ত সিস্টেমে কোনো পরিবর্ধন বা পরিমার্জন প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তা এনবিআর করবে।
* উক্ত সিস্টেম সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।
* ডিপ্লোমেটিক বন্ড অটোমেশন সিস্টেমে বিদেশি কূটনীতিক ও সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের প্রদত্ত ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি এনবিআরে সাথে সমন্বয় করবে।
এনবিআরের কার্যক্রম
এনবিআরের কাস্টমস বিভাগ রফতানি ও বন্ড শাখা ডিপ্লোমেটিক বন্ড অটোমেশন সিস্টেমে লগইন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত বিদেশি কূটনীতিক ও সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের প্রাপ্যতার তালিকা অনুসরণ করে ওয়্যারহাউসের আমদানি প্রাপ্যতার সীমা এন্ট্রি করবেন। যা প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত দ্বিতীয় সচিব নিশ্চিত করবে।
কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কার্যক্রম
* এনবিআরের পাসবই ইস্যু করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অবিলম্বে ডিপ্লোম্যাটিক বন্ড অটোমেশন সিস্টেমে তা আপলোড করবে। একই সঙ্গে পাসবইয়ের তথ্যসমূহ হালনাগাদ করবে।
* ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউসে দায়িত্বপ্রাপ্ত বন্ড কর্মকর্তা ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউসসমূহ কর্তৃক এন্ট্রিকৃত আমদানি ও বিক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য যথাযথভাবে ইন-টু-বন্ড ও এক্স বন্ড কার্যক্রম নিশ্চিত করবেন। এছাড়াও তিনি প্রতিটি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে টিইসি ও পাসবইয়ের তথ্য যথাযথভাবে এন্ট্রি হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করবেন।
ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউসের কার্যক্রম
* প্রতিটি ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউস পণ্য আমদানি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য- যেমন : বিল অব এন্ট্রি নম্বর ও তারিখ, অফিস কোড, ইনভয়েস নম্বর ও তারিখ এবং ক্রয়কৃত পণ্যের নাম, পরিমাণ, সিআইএফ মূল্য ইত্যাদি ডিপ্লোমেটিক বন্ড অটোমেশন সিস্টেমে এন্ট্রি করবে।
* পণ্য বিক্রয়কালে ওয়্যারহাউসসমূহ ডিপ্লোমেটিক বন্ড অটোমেশন সিস্টেমে লগইন করে পাসবই ও টিইসি’র নম্বর এবং পাসপোর্টের তথ্য যাচাই করে ডিপ্লোমেটস ও প্রিভিলাইজড ব্যক্তির নিকট বরাদ্দ অনুযায়ী পণ্য বিক্রয় নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি বিক্রয়কৃত পণ্যের নাম ও পরিমাণ, বিল অব এন্ট্রি নম্বর , সিআইএফ মূল্য প্রভৃতি তথ্য সিস্টেমে এন্ট্রি করবে।
এনবিআরের আইটি অনুবিভাগের কার্যক্রম
* ডিপ্লোমেটিক বন্ড অটোমেশন সিস্টেমে বিদেশি কূটনীতিক ও সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রদত্ত ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
* সিস্টেমের নিরাপত্তা বিধান, নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ, ব্যবহারকারীদের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
* এছাড়াও স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ের মাধ্যমে সিস্টেমের প্রয়োজনীয় মডিফিকেশন, ডেভেলপমেন্ট ও আপগ্রেডেশন নিশ্চিত করবে।
* সিস্টেম পরিচালনার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্যান্য ব্যবহারকারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ হাজার লিটার মদ শুল্কমুক্ত সুবিধায় ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যার হাউসের মাধ্যমে আসে। সেখানে বৈধভাবে মদ আমদানিতে শুল্ক-কর সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ শতাংশ দিতে হয়। বিশেষ সুযোগে আসা এসব মদের একটি বড় অংশ খোলাবাজারে কিংবা বারগুলোতে বিক্রির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এর বাইরেও বিশাল পরিমাণ মদের অবৈধ বিক্রির অভিযোগ তো আছেই। সে কারণেই শুল্কমুক্ত সুবিধায় মদসহ অন্যান্য পণ্যের অপব্যবহার বন্ধে অটোমেটেডের উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর।
কূটনৈতিক অঙ্গনে কর্মরত ব্যক্তি ও দেশে অবস্থানরত বিদেশি ‘প্রিভিলাইজড পার্সনদের’ জন্য আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী শুল্কমুক্ত সুবিধায় মদ আমদানি করা যায়। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী সব দেশই এ সুবিধা দিতে বাধ্য। বর্তমানে দেশে ৬টি ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যার হাউস রয়েছে। ওয়্যার হাউসগুলো হলো- ঢাকা ওয়্যার হাউস লিমিটেড, সাবির ট্রেডার্স লিমিটেড, ন্যাশনাল ওয়্যার হাউস, টস বন্ড প্রাইভেট লিমিটেড, ইস্টার্ন ডিপ্লোমেটিক সার্ভিস অ্যান্ড কবির এন্ড কোং, পর্যটন করপোরেশন অ্যান্ড বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এসব ওয়্যার হাউসের মাধ্যমে দেশে অবস্থানরত কূটনীতিকরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় মদ পান করতে পারেন। কূটনীতিকদের পদবি অনুযায়ী তারা নির্ধারিত পরিমাণ শুল্কমুক্ত সুবিধায় মদ পেয়ে থাকেন।
বিএসডি/আইপি