সাক্ষাৎকারে মুফতি সিদ্দিকুর রহমান
দেশে বিরাজমান করোনা সংকট মোকাবেলায় সম্মিলিত জাতীয় কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন
ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মুফতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন,
করোনার কারণে মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ, চাকরি ও কর্ম হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে মানুষ। আয়-
উপার্জন বন্ধ হয়ে মানুষ অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছে। দেশের বিদ্যমান এই পরিস্থিতি অত্যন্ত
ভারাক্রান্ত ও বেদনাদায়ক। গতকাল বর্তমান সময়ের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে একথা একথা বলেন তিনি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক আন্দোলনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুফতি সিদ্দিকুর রহমান সকলের সুখ-
সমৃদ্ধি, সার্বিক নিরাপত্তা ও শান্তি কামনা করে বলেন, সামাজিক বৈষম্য দূর করে সন্ত্রাস, দুর্নীতি,
মাদকমুক্ত উন্নত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসলামী আন্দোলন কাজ করে চলেছে। তিনি আহবান জানিয়ে
বলেন, আসুন শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়ে ইসলামের শ্বাশত বিধান প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করি, তাহলে
দুনিয়ার শান্তি ও আখেরাতে সীমাহীন নিয়ামতের অংশিদার হতে পারবো ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন,
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত দেশে এবং বিদেশে যারা ইন্তেকাল করেছেন আমরা মহান রাব্বুল
আলামিনের কাছে তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করছি। করোনা মহামারীর ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য
মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট কায়মনোবাক্যে এ দোয়া করছি, তিনি যেন আমাদের সকল প্রকার বিপদ-
আপদ দুর করে দেন এবং করোনা পরিস্থিতির এই বিপর্যকর অবস্থা থেকে মুক্তি দান করেন। মুফতি সিদ্দিকুর
রহমান আরো বলেন, দেশে দ্বিতীয় ধাপের করোনা সংক্রমণ বহুগুণ বেড়েছে। সরকার করোনা মহামারী থেকে
মানুষকে রক্ষার জন্য লকডাউন, শাটডাউন ইত্যাদি ঘোষণা করলেও দেশের দরিদ্র দিনমজুর নিম্নবিত্ত মানুষের
সমস্যার কার্যকর কোন সমাধান করেনি। ফলে সাধারণ খেটে খাওয়া, মধ্যবিত্ত মানুষ অমানবিক কষ্টে
দিনযাপন করছে। যা অমানবিক ও মৌলিক নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী। এই অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের
পাশে সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, করোনা চিহ্নিত
হওয়ার ১৬ মাস পরে বাংলাদেশ এখন করোনা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে। দুঃখজনক সত্য
হলো, এই ১৬ মাসে সরকার আনন্দ উৎসব করলেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। চিকিৎসা ব্যবস্থা
এখনো সেই আগের মতোই ভঙ্গুর ও নাজুক। টিকা নিয়েও সরকারের ব্যর্থতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সরকার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে নাই। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে দেশে
দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। সার্বিকভাবে বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের ব্যর্থতম একটি দেশে পরিণত
হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যেখানে খোলাবাজারে চাল আটা বিক্রি বাড়ানো দরকার, সেখানে সরকার
উল্টো কমিয়ে দিয়েছে। ফলে ওএমএস সেন্টারগুলোতে মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। ক্ষুধার মাত্রা ভারি হচ্ছে।
খাদ্য সচিবের ভাষ্য অনুসারে খোলা বাজারের চালও কালোবাজরে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় এই
সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক কোন অধিকার নাই। গত ১৬ মাসের অভিজ্ঞতা বলছে এই সরকার ক্ষমতায়
থাকলে করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। করোনা মোকাবেলায় সম্মিলিত জাতীয় কমিটি গঠন করা
অপরিহার্য। তিনি বলেন, বন্যায় ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হওয়ায় কৃষকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই সব
বন্যাদুর্গত অঞ্চলে অবিলম্বে সরকারি ত্রাণ বিতরণ এবং বীজতলা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় নতুন বীজ সরবরাহের
দাবি জানান এবং উপদ্রুত এলাকায় সরকারের পাশাপাশি দলের নেতাকর্মী এবং সমাজের বিত্তবানদের
যথাসম্ভব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান মুফতি সিদ্দিকুর রহমান।