নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় সংসদে ৬০টি সংসদীয় আসন নির্ধারণ করে সংখ্যালঘুদের সরাসরি ভোটের ব্যবস্থাসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ।
দাবির মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যাবর্তন আইনের যথাযথ প্রয়োগে যাবতীয় আমলাতান্ত্রিক বাধা অপসারণ করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের আলোকে জমির মালিকানা ও দখল ভুক্তভোগীদের বরাবরে প্রত্যর্পণ করা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিগত সাত দশকের অব্যাহত নির্যাতন, নিপীড়ন, বৈষম্যের কারণে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অগ্রসরমাণ জনগোষ্ঠী থেকে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। বিদ্যমান সংবিধানের ২৮ এর ৪ অনুচ্ছেদের আলোকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর যথাযথ প্রতিনিধিত্ব সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের ৬০টি সংসদীয় আসন নির্ধারণ করে সংখ্যালঘুদের সরাসরি ভোটে সংখ্যালঘুদের জন্য ৬০টি আসন সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত দাবির মধ্যে আরও রয়েছে দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের আইনের যথাযথভাবে কার্যকর করা এবং সব সংখ্যালঘু ধর্ম সম্প্রদায়ের ধর্ম পালনে অধিকতর উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান সরকারি ছুটিসমূহের অতিরিক্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গাপূজায় অষ্টমী থেকে দশমী-তিন দিন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমায় এক দিন ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডেতে এক দিন সরকারি ছুটির ঘোষণা করা।
লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, গত বছর ২১ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে চার মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেশে মোট ১৭৪টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৩ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ৯টি নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ, ৬৪টি উপাসনালয়ে হামলা, ১৫টি কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন, ৩৮টি বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং ২৫টি জোরপূর্বক বাড়িঘর, জমি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের ঘটনা ঘটেছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও জানানো হয়, গত বছর ১৫ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ২ হাজার ৬৪ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে ২৬৭ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ পড়াদের মধ্যে ৮২ জন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য পরিষদের তিন সভাপতি ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, উষাতন তালুকদার, নির্মল রোজারিও; প্রেসিডিয়াম সদস্য ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয়, অধ্যাপক নিরঞ্জন কর্মকার, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপংকর ঘোষ প্রমুখ।