জেলা প্রতিনিধি, মাগুরা:
মাগুরায় সন্তান প্রসবের মাত্র ২০ ঘণ্টা পর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে জাকিয়া সুলতানা নামে এক কিশোরী। মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) দুপুর ২টায় সে জেলার মহম্মদপুর উপজেলার মহম্মদপুর সরকারি আর.এস.কে.এইচ ইনস্টিটিউশন মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের ৮ নম্বর কক্ষে ব্যবসায় উদ্যোগ পরীক্ষায় অংশ নেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাকিয়া মোহাম্মদপুর উপজেলার হরেকৃষ্ণপুর এমএফএ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সে হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের লাভলু মিয়ার মেয়ে। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় জেলার শ্রীপুর উপজেলার মদনপুরের গ্রামের মো. এরশাদ মোল্লার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরশাদ মোল্লা ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে থেকেই জাকিয়া লেখাপড়া চালিয়ে আসছিলেন।
জাকিয়ার শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানান, গতকাল সোমবার দুপুরে প্রসববেদনা শুরু হলে সন্ধ্যা ৬টায় বাড়িতে স্বাভাবিকভাবে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন জাকিয়া। মঙ্গলবার একটি অটোরিকশায় করে জাকিয়াকে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে নিয়ে যান তার বাবা লাভলু মিয়া।
লাভলু মিয়া বলেন, ফুটফুটে নাতনির নাম রাখা হয়েছে তাকিয়া।
শিক্ষকেরা জানান, জাকিয়া দেড় ঘণ্টার পরীক্ষা শেষ করেছে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে বলে সে শিক্ষকদের জানিয়েছে।
জানতে চাইলে হরেকৃষ্ণপুর এমএফএ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বলেন, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় জাকিয়ার বিয়ে হয়। তবে অন্য মেয়েদের মতোই সে নিয়মিত ক্লাস করেছে। বাল্যবিবাহ এবং অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব- এসব কোনো কিছুই তার লেখাপড়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
তিনি আরও জানান, সদ্য সন্তান প্রসবের কারণে পরিবার থেকে তাকে পরীক্ষা না দেওয়ার জন্য বলা হলেও সে কারও কথা শোনেনি। বরং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। সে উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছে। সে পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষক হতে চায়।
সরকারি আর.এস.কে.এইচ ইনস্টিটিউশন মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব এ.কে.এম নাসিরুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষা চলার সময় আমি ওই ছাত্রীর সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছি। সে খুব সাহসের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
মহম্মদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ে গিয়ে বাল্যবিবাহ না করার জন্য আমি শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করি। হয়তো অভিভাবকদের অজ্ঞতার কারণেই মেয়েটির বাল্যবিবাহ হয়েছিল। সদ্য মা হওয়ার পরও জাকিয়া সুলতানা নামে মেয়েটি যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে, এজন্য তাকে আমি সাধুবাদ জানাই।