আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
তিন মাসেরও বেশি সময় আগে তালেবান কাবুলের ক্ষমতা দখলের পর থেকে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। আর্থিক সংকট ও মানবিক সংকট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কার মধ্যেই নতুন তথ্য সামনে এনেছে জাতিসংঘ। জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) ক্রমেই আফগান ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়ছে এবং দেশটির ৩৪টি প্রদেশেই তারা এখন সক্রিয় বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। আফগানিস্তানে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট যে নাম ব্যবহার করে তা হলো ইসলামিক স্টেট অব খোরাসান প্রভিন্স। কট্টরপন্থি এই গোষ্ঠীটি সংক্ষেপে আইএসকেপি বা আইএস-কে নামে পরিচিত।
এই বিষয়ের দিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও নজর দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন দেবোরাহ লিয়ন্স। আফগানিস্তান বিষয়ক জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত এমন এক সময়ে এই মন্তব্য করলেন যখন কাবুলের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বসবাসরত শিয়া জনগোষ্ঠীর এলাকায় দু’টি হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট। ওই হামলায় কমপক্ষে একজন নিহত এবং ৬ জন আহত হন।
দেবোরাহ লিয়ন্স আরও বলেন, জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকেপি’কে মোকাবিলা করতে এবং তাদের বিস্তৃতি ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে তালেবান। তার ভাষায়, ‘আগে কেবল রাজধানী কাবুল ও হাতেগোনা কয়েকটি প্রদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও আইএসকেপি এখন আফগানিস্তানের ৩৪ প্রদেশের প্রায় সবগুলোতেই ছড়িয়ে পড়েছে এবং তাদের তৎপরতাও ক্রমেই বাড়ছে।’
তিনি বলেন, জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকেপি’র হামলাও দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২০ সালজুড়ে জঙ্গিগোষ্ঠীটি আফগানিস্তানে ৬০টি হামলা চালালেও চলতি বছর সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩৪টিতে।
এর জেরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থা আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তাসহ অর্থ সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়। ফলে দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকট প্রতিদিনই খারাপের দিকে যাচ্ছে।
তবে এর মাঝেও আফগানিস্তানে একটি সরকার কাঠামো দাঁড় করাতে তালেবান সত্যিকারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেবোরাহ লিয়ন্স। একইসঙ্গে তালেবানের বিবরুদ্ধে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে সাবেক আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং সদস্যদের ‘বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা’ করার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
জাতিসংঘ বারবার সতর্ক করেছে যে, বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে আফগানিস্তান। দেশটির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ তীব্র খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে এবং প্রচণ্ড শীতের মধ্যে লাখ লাখ আফগান অনাহারের মধ্যে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।
এছাড়া করোনাভাইরাস মহামারি, চলমান খাদ্য সংকট এবং শীত মৌসুমের শুরু আফগানিস্তানের চলমান পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে গেছে। একই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দেবোরাহ লিয়ন্স বলেন, আসন্ন শীত ও খরা মৌসুমের কারণে আফগানিস্তানে মানবিক বিপর্যয় আরও খারাপ হতে পারে।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী যে নাম ব্যবহার করে তা হলো ইসলামিক স্টেট অব খোরাসান প্রভিন্স। এখানে খোরাসান শব্দটি এসেছে আধুনিক আফগানিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ে যে অঞ্চল তার প্রাচীন নাম থেকে।
আইএস-কে সশস্ত্রগোষ্ঠীর জন্ম ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে। এর মূল ঘাঁটি আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় নানগারহার প্রদেশে। পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এই এলাকাটি মাদক ও মানুষ পাচারের জন্য কুখ্যাত।
এই গোষ্ঠীর সদস্যরা মূলত আফগান জিহাদি। আফগান তালেবান থেকে দলত্যাগী অনেকে আইএস-কে’তে যোগ দিয়েছে। আফগানিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত সরকারের হাতে পর্যুদস্ত হওয়ার আগে এক সময় এই গোষ্ঠীর যোদ্ধা ছিল তিন হাজারেরও বেশি।