‘সুখে ভরবে আগামী দিন, পেনশন এখন সর্বজনীন’ এ স্লোগানকে ধারণ করে প্রৌঢ় জীবনকে সুখে ভরাতে সরকারের নতুন কর্মসূচিতে যুক্ত হতে শুরু করেছেন নাগরিকরা। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের মানুষকে পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনতে সরকারের সর্বজনীন এই কর্মসূচি চালুর প্রথম দিনই ভালো সাড়া মিলেছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার মানুষ নিবন্ধন করেন। পরবর্তীতে রাত ১২টা পর্যন্ত নিবন্ধনকারীর সংখ্যা বেড়ে ৮ হাজারে দাঁড়ায়। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০০ জন আবেদনের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে চাঁদা পরিশোধ করেন।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রথম দিনে যে সাড়া পাওয়া গেছে, সেটি উৎসাহ ব্যঞ্জক। সামনের দিনগুলোয় সর্বজনীন পেনশনে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে।
দেশের চার শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষকে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থার আওতায় আনার কথা বিবেচনায় নিয়েই এই কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। শুরুতে পেনশন-ব্যবস্থায় রয়েছে চারটি আলাদা স্কিম।
স্কিমগুলো হচ্ছে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা। এর মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রবাস, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি। এছাড়া রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে ও তাঁতি ইত্যাদি স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সমতা স্কিম নেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
এ পেনশন কর্মসূচিতে নিজস্ব আয় না থাকা, অর্থাৎ পুরোদস্তুর গৃহিণীরাও সরকারের জাতীয় পেনশন কর্মসূচিতে (স্কিম) অংশ নিতে পারবেন। স্বকর্ম ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মীদের জন্য ‘সুরক্ষা’ নামে যে স্কিম রয়েছে, সেটিতেই গৃহিণীরা নিবন্ধন করে চাঁদা দিতে পারবেন।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) গৃহিণীদের কাজের আর্থিক হিসাব যোগ হয় না। কিন্তু তাদের শ্রমের মূল্য আছে। সেই বিবেচনা থেকে গৃহিণীরা স্বকর্মে যুক্ত হিসেবে পেনশন কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন। নিজস্ব আয় না থাকলেও পরিবারের অন্য সদস্যের আয় থেকে তারা পেনশনের চাঁদা দেবেন।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী সব নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ওয়েবসাইটে (www.upension.gov.bd) গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। যেসব প্রবাসীর বাংলাদেশের এনআইডি নেই, তারা বৈধ পাসপোর্টের ভিত্তিতে ব্যাংকিং চ্যানেল, অনুমোদিত মোবাইল আর্থিক পরিষেবা এবং এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা দিয়ে কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পারবেন। নিবন্ধনের পর একটি নম্বর পাওয়া যাবে, যা দিয়ে চাঁদা পরিশোধসহ সব কাজ করা যাবে। গ্রামীণ পর্যায়ে থানার করতে সহযোগিতা করবে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। এ কার্যক্রমকে আরও সহজ করতে শিগগির মোবাইল অ্যাপস চালু করবে পেনশন কর্তৃপক্ষ।
উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপাতত চার স্কিম শুরু হলেও আগামীতে আরও দুটি স্কিম চালু হবে। এ বিষয়ে পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী এবং সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আরও দুটি স্কিম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বর্তমানে তাদের পেনশন দেয় সরকার। তাই এটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। চলমান চারটি স্কিম পরিচালনার অভিজ্ঞতা এবং সফলতার ভিত্তিতে ওই দুটি স্কিম চূড়ান্ত করা হবে।
পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, ঘোষণা দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পর এ স্কিম দুটি বাস্তবায়ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে ২০৩১ সালের শুরুতে যারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করবেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি বাস্তবায়ন করা হতে পারে। তারা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় নির্ধারিত স্কিমে পেনশন পাবেন। এ ছাড়া এর আগ পর্যন্ত সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা প্রচলিত নিয়মেই পেনশন পাবেন।