নিজস্ব প্রতিবেদক
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চলছে নানাবিধ অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্য—এমন অভিযোগে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সাধারণ সেবাগ্রহীতারা। তাদের অভিাযোগ, নম্বর প্লেট সরবরাহের নামে নেওয়া হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা, যা সরকারি নিয়মের বাইরে।
প্রতিদিনই দেখা যায়, প্রশাসকের কার্যালয়ের আঙিনায় সারি সারি মোটরসাইকেল রাখা। নম্বর প্লেট সংগ্রহ করতে আসা মোটরসাইকেল মালিকদের অভিযোগ, ব্যাংকে সরকারি ফি জমা দেওয়ার পরও প্লেট লাগানোর সময় অতিরিক্ত টাকা দাবি করা হয়।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খানপুর গ্রামের প্রবাসী মো. সিদ্দিক হোসেন বলেন, ‘গত বছর দেশে ফিরে নতুন মোটরসাইকেল কিনি। কাগজপত্র ঠিক করে অফিস থেকে মেসেজ পেয়ে নম্বর প্লেট নিতে আসি। প্লেট লাগানোর সময় ১০০ টাকা চাইলে আমি বলি—আমি তো সব টাকা জমা দিয়েছি, আবার কিসের টাকা? তখন তারা বলছে—“দিতে হবে।” আমি টাকা না দিলে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। এটা অত্যন্ত অপমানজনক। আমি চাই, দেশে কোনো সেক্টরেই দুর্নীতি না থাকুক।’
জেলা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘আমি নিজের গাড়ির নম্বর প্লেট নিতে গেলে ২০০ টাকা চাই। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর আর নেয়নি। কিন্তু আমার এক সহকর্মীর কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়েছে। আজ আমরা দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন করছি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বারান্দায় বসে বিআরটিএ কর্মকর্তারা যে আচরণ করছেন, তা অগ্রহণযোগ্য। যারা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন, তাদের সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা চাই।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ নম্বর প্লেট সেকশনের সাইফুল ইসলাম প্রথমে বলেন, ‘এরকম তথ্য আমাদের জানা নেই। আপনারা যদি ফুটেজ দেখাতে পারেন, আমাকে যে শাস্তি দেবেন মাথা পেতে নেব।’ তবে কথার এক পর্যায়ে নিজেই বলেন, ‘আমার সঙ্গে যিনি আছেন (শরিফুল ইসলাম) উনি টাকা নিচ্ছেন কি না আমি জানি না।’
এই বক্তব্যে স্পষ্ট দ্বিধা ও দায় এড়ানোর প্রবণতা দেখা যায়। একদিকে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করছেন, অন্যদিকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের সহকর্মী হিসেবে স্বীকার করে নিচ্ছেন, কিন্তু দায় নিচ্ছেন না।
নম্বর প্লেট সেকশনের ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শুধু নম্বর প্লেট লাগিয়ে দিই। যারা মেসেজ পায়, তাদের প্লেট এনে দিই। কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয় না। আমি কারো কাছ থেকে টাকা নিয়েছি-এমন একটি ফুটেজ দেখাতে পারলে ব্যবস্থা নিন।’
বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার কে. এম. মাহাবুব কবির বলেন, ‘আপনারা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন, তাদের নাম লিখিতভাবে জানান। আমাদের এখানে তিনটি ভেন্ডার প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এদের একটির দায়িত্ব নম্বর প্লেট। আমরা সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারি না, তবে তথ্য পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ তিনি আরও জানান, ‘বিআরটিএর সব অর্থ লেনদেন ব্যাংকিং সিস্টেমে হয়। হাতে টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই।’
সচেতন মহলের প্রশ্ন, একজন কর্মচারী যদি ৫ বছর ধরে একই পদে থেকে প্রতিদিন এমন অভিযোগের মুখোমুখি হন, তাহলে কীভাবে তা কর্তৃপক্ষের চোখ এড়িয়ে যায়? স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দ্রুত তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নয় তো সাধারণ জনগণের ভোগান্তি ও দুর্নীতির সংস্কৃতি কখনোই বন্ধ হবে না।