আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার বিশেষ নিরাপত্তা চুক্তি ও সাবমেরিন ইস্যুতে কার্যত ‘টালমাটাল’ পশ্চিমা দেশগুলোর মিত্রতা। চুক্তির ঘোষণা সামনে আসার পরপরই ক্ষোভ প্রকাশে এক মুহূর্ত দেরি করেনি ফরাসি সরকার। সংকটের গুরুত্ব বোঝোতে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতও প্রত্যাহার করে ফ্রান্স। বাতিল করা হয় যুক্তরাজ্য-ফ্রান্স প্রতিরক্ষা আলোচনাও। তবে এই সংকটে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) পাশে পেয়েছে প্যারিস।
মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি ও সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।
জার্মান সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শুরু হচ্ছে। তবে সেই অধিবেশনের পাশাপাশি আপাতত প্রচারের আলো পেয়েছে আরও এক বৈঠক। ইইউ’র দেশগুলো জাতিসংঘের অধিবেশনের সাইডলাইনে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করবে। আর সেখানে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার বিশেষ নিরাপত্তা চুক্তি ও সাবমেরিন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে।
সোমবার ইউরোপীয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেছেন, আমাদেরও কিছু বিষয় জানার আছে। কিছু প্রশ্ন আছে, যার উত্তর পাওয়া দরকার। সিএনএন’কে তিনি বলেন, আমাদের এক সদস্য দেশের সঙ্গে এমন ব্যবহার করা হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা জানতে চাই কী হয়েছিল, কেন এটা হলো?
ইইউ’র অন্যতম প্রধান কূটনীতিক জোসেপ বোরেল বলেছেন, নিউইয়র্কে এক বৈঠকে ফ্রান্সের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রধান চার্লস মাইকেল বলেছেন, তিন দেশের বিশেষ নিরাপত্তা চুক্তি ও সাবমেরিন ইস্যুতে সৃষ্ট টানাপোড়েনের উত্তর খুঁজছে তার সংস্থা। তিনি বলেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বিশ্বাসের ব্যাপারে মিত্র দেশগুলোর নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
রিপোর্টারদের তিনি বলেন, ‘সাবমেরিন ইস্যুতে স্বচ্ছতা ও বিশ্বস্ততার ঘাটতি দেখতে পারছি আমরা।’
অন্যদিকে সোমবার ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিন দেশের মধ্যে সাবমেরিন চুক্তি আস্থার সংকট তৈরি করেছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের মনে হয়, একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়া, অন্যকে না বোঝার নীতি নিয়ে অতীতেও তারা চলেছেন, এখনও চলছেন।
উল্লেখ্য, চীনকে মোকাবিলা করতে প্রভাবশালী পশ্চিমা তিনটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগে অকাস নামের একটি নিরাপত্তা চুক্তির কথা ঘোষণা করার কয়েকদিন পরেই এই সমঝোতা বড় ধরনের সমালোচনার মুখে পড়ে। ঐতিহাসিক এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণের জন্য উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সরবরাহের কথা বলা হয়েছে।
পরমাণু শক্তিধর দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের শক্তিধর সদস্য ফ্রান্স এই চুক্তির কঠোর সমালোচনা করেছে। অকাসের তীব্র নিন্দা করে বলেছে- এর মাধ্যমে তাদের ‘পিঠে ছুরি মারা হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার এই নতুন উদ্যোগে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ হয়েছে প্যারিস। কারণ তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে অস্ট্রেলিয়ার সাথে তাদের পূর্ব-স্বাক্ষরিত বহু কোটি ডলারের একটি সমঝোতার অবসান ঘটেছে।
২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার মূল্যের সেই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। ওই চুক্তির আওতায় অস্ট্রেলিয়ার জন্য ১২টি সাবমেরিন নির্মাণ করার কথা ছিল।