সাভার প্রতিনিধি:
ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে সালমা। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ছাপিয়ে জীবনের প্রতিটি ধাপ সফলভাবেই অতিক্রম করেছেন তিনি।
বর্তমানে সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে মাস্টার্সে পড়ছেন তিনি।পাশাপাশি এবার ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচনে মাঠে নেমেছেন। আগামী ৫ জানুয়ারি ৫ম ধাপের নির্বাচনে সাভারে ইউপি সদস্য হিসাবে লড়বেন তিনি। সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনে প্রার্থী হিসেবে বুধবার সাভার অধরচন্দ্র স্কুলে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , বিরুলিয়ার কালিয়াকৈর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর মেয়ে সালমা আক্তার। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জন্মের পরই তার বাবা-মা অনুভব করেছিলেন সালমা হবে খর্বাকৃতির। এ নিয়ে তাদের দুঃখের সীমা ছিল না। সব সময় তারা চিন্তা করতেন। সে তাদের পরিবারের বোঝা হয়ে থাকবে। কিন্তু তিনি সকল প্রতিবন্ধকতা ছাপিয়ে ২০২০ সালে বিএ পাস করে বর্তমানে সাভার বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে পড়ছেন তিনি। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজও করছেন তিনি।
এবার ইউপি সদস্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনও করছেন। এলাকাবাসীর ব্যাপক সারা পেয়ে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন তিনি। তিনি দেখাতে চান প্রতিবন্ধী বা খর্বাকৃতির নারীরা বোঝা নন। সালমা আক্তার বলেন, আমি ছোট বেলা থেকে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। স্কুলে যাওয়ার পথে মানুষ হাসাহাসি করত। কলেজে যেতে বাসে উঠলেও ব্যঙ্গ করত মানুষ। বলত, আমি লেখাপড়া করে কি করব। আমি দেখাতে চাই খর্বাকৃতিরা বোঝা নয়। তারাও অনেক কিছু করতে পারেন। আমি ইউনিয়ন পরিষদে কাগজপত্র নিতে ভোগান্তিতে পড়েছি। এ ধরনের ভোগান্তি নিরসনে কাজ করব। মানুষ অবহেলিত হলে তাদের কি যন্ত্রণা তা আমি বুঝি। তাই অবহেলিতদের নিয়ে কাজ করতে চাই। আমি মানুষের সেবা করে দেখিয়ে দিতে চাই খর্বাকৃতির মানুষও সব করতে পারে। এলাকাবাসীরও ব্যাপক সারা পাচ্ছি। এমন থাকলে আমি অবশ্যই নির্বাচিত হব। এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, এবার সংরক্ষিত আসনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের মধ্যে খর্বাকৃতির হলেও সালমা বেশি শিক্ষিত। সে প্রতিবন্ধী হয়ে দেখিয়ে দিতে চায় প্রতিবন্ধীরা বোঝা নয়। তাই আমরা মনে করি, তাকে সুযোগ দেওয়া দরকার। তার কাছ থেকে প্রতিবন্ধীর বাবা-মা কিংবা প্রতিবন্ধীরা যেন অনুপ্রেরণা পান। এ জন্য হলেও আমরা তাকেই ভোট দেব।
সালমার ভগ্নিপতি সিরাজুল বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে তাকে সহযোগিতা করেছি। এখনও করে যাচ্ছি। তার স্কুল কলেজ পর্যন্ত আমি দিয়ে এসেছি। নির্বাচনেও আমি পাশে থেকে সহযোগিতা করে যাব। আমরা তাকে নিয়ে গর্বিত। সে প্রমাণ করেছে প্রতিবন্ধীরা বোঝা নয়। সাভারের বিরুলিয়া ও বনগাঁও ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামান রেনু বলেন, সালমা আক্তার বিরুলিয়ার ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে বদ্ধপরিকর বলে জানান তিনি।
বিএসডি / ইয়াসিন/আইপি