নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথে ওয়াটার বাস প্রকল্প ভেস্তে গেছে। বর্তমানে ১২টি ওয়াটার বাসের মধ্যে একটি ছাড়া বাকিগুলো পড়ে আছে অব্যবহৃত অবস্থায়। এগারো বছর আগে চালু হলেও কখনো লাভের মুখ দেখেনি প্রকল্পটি। মোট ৯ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটি এখন অচল। এ পরিস্থিতিতে অব্যাহত লোকসানের মুখে ওয়াটার বাস বিক্রি করে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
বিআইডব্লিউটিসি’র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বুড়িগঙ্গার বাদামতলী ঘাট থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত ওয়াটার বাস চলাচল শুরু হয় ২০১০ সালে। নামানো হয় ১২টি ওয়াটার বাস। এগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে গেছে সাত বছরের বেশি সময় ধরে। বর্তমানে ১২টি ওয়াটার বাসের মধ্যে ৭টি সচল, বাকি ৫টি অচল। সচল ৭টি ওয়াটার বাসের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান চারটি ভাড়া নিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে যাত্রী পারাপার করছে। একটি চট্টগ্রামে বিআইডব্লিউটিসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যবহার করছেন। অপরটি ডকইয়ার্ডে মেরামতাধীন রয়েছে। বাকিগুলো ফেলে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় এসব ওয়াটার বাস বিক্রির জন্য নিলাম বা টেন্ডার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানজট কমাতে সড়ক, রেল ও নদী তিনটি পথই একসঙ্গে কাজে লাগানোর বিকল্প নেই। তবে ঢাকার পুরো নৌপথ তো দূরের কথা, দফায় দফায় চেষ্টা করে সদরঘাট-গাবতলী পথ, টঙ্গী-নারায়ণগঞ্জ পথ ও শেষে বুড়িগঙ্গায় পারাপারেও ব্যর্থ যাত্রীবাহী ওয়াটার বাস। তড়িঘড়ি করে চালু করা এ প্রকল্পে সম্ভাব্যতা পরীক্ষাটাও হয়নি। ২০০৪ সালে যাত্রা শুরুর পর ক্রমাগত কোটি কোটি টাকা জলে যায়। কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার জন্যই মূলত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এ প্রকল্পটি হাতে নেয়ার আগে ছিল না কোনো সামগ্রিক পরিকল্পনা। ফলে এটি এখন সরকারের মন্দ বিনিয়োগে পরিণত হয়েছে।
জানতে চাইলে নগর বিশেষজ্ঞ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকার চারপাশের নদ-নদীর দখলমুক্ত করে নাব্য বৃদ্ধি করে বৃত্তাকার নৌপথ চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর। সে লক্ষ্যে বেশকিছু কর্মপরিকল্পনাও আলোচনা করা হয়। তবে কর্তৃপক্ষ সার্বিকতা নির্ভর পরিকল্পনা না করে তড়িঘড়ি করে ওয়াটার বাস ক্রয় করে। এটা ঘোড়ার আগে গাড়ি কেনার মতো ঘটনা ঘটেছে।
বিআইডব্লিউটিসির নথিপত্র থেকে জানা যায়, তিন দফায় উৎপাদিত ১২টি ওয়াটার বাসের উৎপাদনে খরচ হয়েছে মোট ৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। শুধু ২০১৮-১৯ অর্থবছরের হিসাব ঘেঁটে দেখা যায়, সদরঘাট গাবতলী নৌপথে আয় হয় ৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। এই সময় শুধু জ্বালানি খরচই ছিল ৪১ লাখ টাকা। এর বাইরেও রয়েছে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ও কর্মীদের বেতন ভাতা। তবে শেষ পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। জ্বালানি খরচ, বেতন ভাতাসহ অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তার নির্দিষ্ট পরিমাণ জানা যায়নি। বৃত্তাকার নৌপথ প্রকল্পের তিন পর্বের উদ্যোগে প্রথম দুটিতেই খরচ হয় প্রায় ১০০ কোটি।
বিএসডি/ এলএল