নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রায় তিনদিন ধরে চলা অঘোষিত বাস ধর্মঘট শেষ হলো সরকারের পক্ষ থেকে মালিকদের দাবি মেনে নেওয়ার মধ্য দিয়ে। তাদের দাবি ছিল, ডিজেলের দাম যেহেতু বাড়ানো হয়েছে, সেহেতু বাসভাড়াও বাড়াতে হবে।
রোববার বিকেলে মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার ডিজেলচালিত বাসের ভাড়াবৃদ্ধির ফিরিস্তি তুলে ধরেন সাংবাদিকদের কাছে।
এর পাশাপাশি তিনি জানান, ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া বাড়লেও বাড়ছে না সিএনজিচালিত বাসের ভাড়া। অঘোষিত ধর্মঘটে সিএনজিচালিত যেসব বাস সেবা দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, সিএনজিচালিত বাসের ভাড়া বাড়বে না, তাদের আগের ভাড়াই নিতে হবে। ধর্মঘটের সময় সিএনজিচালিত যেসব বাস তাদের সেবা বন্ধ রেখেছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ধর্মঘটের দুদিন ভোগান্তিতে থাকা যাত্রীদের মাথায় কেবল একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল, সরকার ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়েছে। কিন্তু সিএনজির দাম বাড়ায়নি। তবে সিএনজিচালিত বাসগুলো কেন সড়কে দেখা যায়নি?
সিএনজিচালিত বাস আগের ভাড়ায় চলবে কি না- তার ইঙ্গিত মিল বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহর বক্তব্যে।
তিনি বলেন, সিএনজিচালিত বাসের সংখ্যা দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ। এসব বাস শুধু মহানগরেই চলাচল করে। এই অল্পসংখ্যক বাসকে আলাদা করা উচিত হবে না। সিএনজিচালিত বাসেরও মেইনটেন্যান্স খরচ বেড়েছে। তাদের নতুন ভাড়ার আওতায় আনা না হলে তারাও বঞ্চিত থেকে যাবে।
কত বাড়ল ভাড়া?
বৈঠক শেষে জানানো হয়, দূরপাল্লার ভাড়া বেড়েছে ২৭ শতাংশ আর মহানগরে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৩ সালে নির্ধারণ করে দেওয়া বাসের ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে ১ টাকা ৮০ পয়সা আর ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে করা হয়েছে ২ টাকা ১৫ পয়সা। মহানগরে মিনিবাসে ১০ পয়সা কম অর্থাৎ ২ টাকা ৫ পয়সা করে ভাড়া নেওয়া হবে। মহানগরে মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ৮ টাকা আর বড় বাসের ১০ টাকা।
যাত্রীদের ভোগান্তির দায় নেবে কে?
অঘোষিত ধর্মঘটে যাত্রীদের যে ভোগান্তি হয়েছে, তার দায় নিচ্ছে না কেউই। বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান সুকৌশলে এ দায় নেওয়ার প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। আর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বাস ধর্মঘট আহ্বান করিনি। বাস মালিকরা বলেছিলেন, তারা অতিরিক্ত দামে ডিজেল কিনে বাস চালাতে পারবেন না। তাই তারা বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আমরা শুধু তাদের সেন্টিমেন্টের সঙ্গে এক ছিলাম।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কোনো নেতাও পরিবহন ধর্মঘট পরিস্থিতির বিষয়ে দায় নিতে রাজি নন। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীর বক্তব্য, এটি বাসমালিকদের বিষয়। পরিবহন শ্রমিকরা তাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে সহায়তা করেছেন মাত্র। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
মালিকদের কণ্ঠেই কথা বললেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান
বিআরটিএর সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে দূরপাল্লার বাস ভাড়া ৪১ শতাংশ আর মহানগরে ৫০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেন মালিকরা। বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, গত আট বছর ধরে বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। আমরা হিসাব করে দেখেছি, গত আট বছরের ভাড়া ও বর্তমান তেলের দাম সমন্বয় করতে গেলে দূরপাল্লার বাসে ৪৭ শতাংশ ও মহানগরে ৪৬ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো দরকার। তবে যাত্রীদের ওপর যাতে চাপ না পড়ে, সেই চিন্তা করে ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তেলের হিসাবের সঙ্গে ভাড়া মেলালে চলবে না।
বৈঠকে কালক্ষেপণ কেন ?
বৃহস্পতিবার বিআরটিএ চেয়ারম্যান বরাবর ভাড়া সমন্বয় চেয়ে চিঠি দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। চিঠি পাওয়ার পর দ্রুত কেন বৈঠক আহ্বান করা হলো না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, বাসমালিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে এক করতে পারছিলাম না। আজও অনেকে এসেছেন, অনেকে অনুপস্থিত। এর বেশি কথা বলতে চাননি সংস্থাটির চেয়ারম্যান।
গত ৩ নভেম্বর রাতে ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করে সরকার, যা ৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়। তখন পরিবহন মালিকরা বলেন, এত দামে ডিজেল কিনে বিদ্যমান ভাড়ায় গাড়ি চালানো সম্ভব নয়।
পরে মালিকরা শুক্রবার সকাল থেকে বাসসহ পণ্যবাহী যান চালানো বন্ধ করে দেন। যদিও মালিক সংগঠনগুলোর দাবি, ধর্মঘটের বিষয়ে তাদের কোনো নির্দেশনা ছিল না। অঘোষিত ওই ধর্মঘটের ফলে সারাদেশে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিআরটিএর কাছে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয় বৃহস্পতিবার বিকেলে। কিন্তু বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বিআরটিএ মালিক সমিতিকে বৈঠকের জন্য ডাকে রোববার।
রোববার বিকেলে বৈঠক শেষে মালিকপক্ষের দাবি মেনে বাসের ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিআরটিএ। ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।