নিজস্ব প্রতিবেদক:
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের পক্ষে একজন সাক্ষীকে জেরা করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তার নিযুক্ত আইনজীবী।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) তৃতীয় দফায় সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ দিনে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
ওই সময় আদালতে সাক্ষী সার্জেন্ট আইয়ুব আলীর দেওয়া জবানবন্দির বিপক্ষে আসামি প্রদীপ কুমার দাশের পক্ষে জেরা করার জন্য বলা হলে তার নিয়োজিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত ওই সাক্ষী সেনা সদস্য সার্জেন্ট আইয়ুব আলীকে জেরা করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সার্জেন্ট আইয়ুব আলী হলেন আলোচিত এই মামলায় জবানবন্দি গ্রহণ করা ১২তম সাক্ষী।
জেরা করতে অপারগতা প্রকাশ করায় আসামি প্রদীপ কুমার দাশ নিজে অথবা অন্য কোনো আইনজীবী দিয়ে সাক্ষী সার্জেন্ট আইয়ুব আলীকে জেরা করবেন কিনা জানতে চাইলে প্রদীপ কুমার দাশ জেরা করবেন না বলে আদালতকে জানান।
এর আগে বুধবার সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে আসামি প্রদীপ কুমার দাশের নিয়োজিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার বিষয়ে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স-ডিজিএফআই) তৈরি করা প্রতিবেদন এবং ডকুমেন্টস তলব করেন। পরে মামলার মূল নথির সাথে সংযুক্ত করার জন্য আদালতে আবেদন করেন।
ওই সময় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল আবেদনটি শুনানি করে বিষয়টি জুডিশিয়ালি বিষয় না হওয়ায় সেটি নাকচ করে দেন। তবে সাক্ষী সার্জেন্ট আইয়ুব আলীকে অন্যান্য আসামির আইনজীবীরা যথারীতি জেরা করেন।
মামলার ১৩তম সাক্ষী ও কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরীকে আসামি প্রদীপ কুমার দাশের পক্ষে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত ‘ডিক্লাইন্ট’ করেন। অর্থাৎ অন্যান্য পূর্বতন আসামির পক্ষে সাক্ষী ডা. শাহীন আবদুর রহমানকে যেসব জেরা করা হয়েছে, একই জেরা তার জন্য প্রযোজ্য বলে গণ্য করা হবে।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটির আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম, অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মোজাফফর আহমদ, এপিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এ সময় বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম টিপু, অ্যাডভোকেট ফারহানা কবির চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছৈয়দুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট এসমিকা সুলতানা প্রমুখ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আসামিদের পক্ষে আদালতে অ্যাডভোকেট দিলীপ দাশ, অ্যাডভোকেট শামশুল আলম, অ্যাডভোকেট মমতাজ আহমদ (সাবেক পিপি), অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া, অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ, অ্যাডভোকেট এম এ বারী, অ্যাডভোকেট ওসমান সরওয়ার শাহীন, অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন শিমুল, অ্যাডভোকেট ইফতেখার মাহমুদ প্রমুখ সাক্ষীদের জেরা করেন।
এর আগে আরও ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন করা হয়। যারা আগে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারা হলেন- মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সাহিদুল ইসলাম সিফাত, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ আমিন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও হাফেজ শহীদুল ইসলাম, আবদুল হামিদ, ফিরোজ মাহমুদ ও মোহাম্মদ শওকত আলী, হাফেজ জহিরুল ইসলাম ও ডা. রনধীর দেবনাথ।
এ দিকে, কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার এম নুরুল কবির জানান, সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) থেকে বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত একটানা ৩ দিন সাক্ষ্য দিতে আদালতে উপস্থিত থাকার জন্য চার্জশিটের ২৯ নম্বর পর্যন্ত আরও মোট ২৩ জন সাক্ষীকে সমন দেওয়া হয়েছিল। তারমধ্যে প্রতিদিন ৪ জন করে সাক্ষী আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। তবে সাক্ষীরা যথারীতি আদালতে উপস্থিত থাকলেও আসামিদের পক্ষে সাক্ষীদের দীর্ঘ জেরার কারণে সমন দেওয়া সকল সাক্ষীদের সাক্ষ্য নির্ধারিত দিনে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন এপিপি ও কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ।
এ দিকে, গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে সাক্ষ্য গ্রহণকালে মামলার ১৫ জন আসামিকেও কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয়। তারা হলেন, বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট সকালে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
বিএসডি/আইপি