নিজস্ব প্রতিবেদক,
জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা করে। জানান দেয় তাদের অস্তিত্বের। এরমধ্যে খুলনার ১০ স্থানে হামলা করে জঙ্গি এ সংগঠন।
এই সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় খুলনার বিভিন্ন থানায় ৬টি মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে একটি মামলার বিচার শেষ হয়েছে। অন্য ৫ মামলার বিচার কাজ দীর্ঘ ১৬ বছরেও শেষ হয়নি। করোনা পরিস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম সীমিত হওয়ায় মামলার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
খুলনার যেসব স্থানে হামলা করা হয় সেগুলো হলো-খুলনা মুখ্য মহানগর হাকিমের এজলাসের সামনে, এজি পেনশন অফিসের পেছনে, ডাকবাংলো জামে মসজিদের পাশে, রূপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে, দৌলতপুরের বিএল কলেজের পূর্ব পাশে ও সরকারি শিশুসদন এলাকায়, সোনাডাঙ্গা কেডিএ নিউ মার্কেটের সিঁড়িঘরে ও লতিফ ফিলিং স্টেশনের পাশে, বটিয়াঘাটা উপজেলার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রাবাসের পাশে। এ ঘটনায় ২ শিশুসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বোমার স্প্লিন্টার ও জেএমবির লিফলেট উদ্ধার করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই সিরিজ হামলার ঘটনায় খুলনায় সদর থানায় ২টি, দৌলতপুর থানায় ২টি, সোনাডাঙ্গা থানায় ১টি ও বটিয়াঘাটা থানায় ১টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে খুলনা সদর থানায় করা মামলায় পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে ২০০৫ সালের ৮ নভেম্বর। আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয় ২০০৮ সালের ১২ জুন। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ওই বছর ২২ জুলাই। এ মামলায় সাক্ষী ৪৭ জন। দৌলতপুর থানায় দায়েরকৃত মামলায় চার্জ গঠন হয় ২০০৮ সালের ২০ মে। সাক্ষী রয়েছেন ২৯ জন। সোনাডাঙ্গা থানায় করা মামলায় চার্জ গঠন হয় ২০০৮ সালের ২৯ জুন। এ মামলায় ৩৯ জন সাক্ষী রয়েছেন।
এর আগে বটিয়াঘাটা থানায় দায়েরকৃত মামলায় ২০১০ সালের ৩১ মে খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সেকেন্দার আলী রায় দেন। মামলার রায়ে জেএমবি প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান ও সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইসহ দুইজনের প্রত্যেককে ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
খুলনা সদর থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামিরা হলেন, শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলাভাই, শহীদুল্লাহ ওরফে লোকমান, মাহবুবুর রহমান ওরফে লিটন ওরফে পলাশ, আসাদুল ইসলাম ওরফে আসাদুল ওরফে আরিফ ওরফে আসাদ, মেহেদী হাসান ওরফে তানভীর, খালিদ হাসান ওরফে মন্টু, হাফেজ মাহমুদ ওরফে হাসান ওরফে সুমন, সাইফুল ইসলাম।
আসামিদের মধ্যে শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
খুলনার যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট আল আমিন বলেন, খুলনায় সিরিজ বোমা হামলার তিনটি মামলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিটি মামলায় গড়ে ২০ থেকে ২৫ জনের স্বাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি সাক্ষ্যও দ্রুত সম্পন্ন হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম সীমিত হওয়ায় মামলার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এ আদালতে আগামী ৩১ আগস্ট একটি মামলায় স্বাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জেএমবির জঙ্গিরা খুলনাসহ ৬৩ জেলায় একযোগে একই সময়ে কমপক্ষে পাঁচশ জায়গায় বোমা হামলা করে। এ সময় আইনজীবী, বিচারক, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ হতাহত হন।
বিএসডি/আইপি