আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের হামলার মুখে ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়া প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। আসাদ ও তার পরিবার সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে আসাদ পালাতে না পালাতেই সিরিয়ায় হামলা করেছে ইসরায়েল। দেশটি বলেছে, তারা সিরিয়ায় সন্দেহভাজন রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ এবং দূরপাল্লার রকেটে হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে সিরিয়ায় আইএস ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও।
অপরদিকে সিরিয়ায় সরকারহীনতার সুযোগ নিয়ে গোলান মালভূমি দখল করে নিয়েছে ইসরায়েল। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) এসব তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও ডয়চে ভেলে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার বলেছেন, তারা সিরিয়ায় সন্দেহভাজন রাসায়নিক অস্ত্রের স্থাপনা এবং দূরপাল্লার রকেটগুলোতে হামলা করেছে যাতে সেগুলো শত্রুদের হাতে না পড়ে।
তিনি আরও বলেছেন, “আমাদের একমাত্র স্বার্থ হচ্ছে ইসরায়েল এবং ইসরায়েলি নাগরিকদের নিরাপত্তা। তাই আমরা সেইসব কৌশলগত অস্ত্র ব্যবস্থায় আক্রমণ করেছি, যেমন— অবশিষ্ট রাসায়নিক অস্ত্র বা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং রকেট, যাতে সেগুলো চরমপন্থিদের হাতে না পড়ে।”
অন্যদিকে দুটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রোববার সিরিয়ার রাজধানীতে ইসরায়েলের বিমান হামলার লক্ষ্য ছিল একটি নিরাপত্তা কমপ্লেক্স এবং একটি গবেষণা কেন্দ্র। ইসরায়েল দাবি করে থাকে, ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ও উন্নয়নের জন্য ওই কেন্দ্র ব্যবহার করেছে ইরান।
তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলের চালানো তিনটি অভিযানে প্রধান শুল্ক সদর দপ্তর এবং নিরাপত্তা কমপ্লেক্সের মধ্যে সামরিক গোয়েন্দা অফিস সংলগ্ন ভবনগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গবেষণা কেন্দ্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কমপ্লেক্সটি দামেস্কের কাফর সুসা এলাকায় অবস্থিত।
একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স আরও জানিয়েছে, এই হামলায় স্পর্শকাতর সামরিক তথ্য, সরঞ্জাম এবং গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রের অংশ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত অবকাঠামোতে আঘাত করা হয়েছে। দামেস্কের পাশাপাশি রোববার সিরিয়াজুড়ে আরও বেশি ইসরায়েলি হামলা হয়েছে।
সূত্রগুলো বলেছে, ইসরায়েল দক্ষিণ-পশ্চিম সিরিয়ায় অন্তত সাতটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সুইদা শহরের উত্তরে অবস্থিত খালখালা বিমানঘাঁটিও। এখান থেকে সিরিয়ার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হয়েছে আগেই, সেইসাথে দামেস্কের দক্ষিণ-পশ্চিমে মেজ্জাহ সামরিক বিমানবন্দরের কাছে গোলাবারুদ ডিপোতেও হামলা করেছে ইসরায়েল।
এদিকে ব্রিটেন-ভিত্তিক সিরীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী “পূর্ব দেইর আজ জোর প্রদেশে বিলুপ্ত সরকার ও ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর অন্তর্গত অস্ত্রের ডিপো এবং অবস্থানগুলোতে” বোমাবর্ষণ করেছে।
অন্যদিকে সিরিয়ায় আইসিস ঘাঁটি লক্ষ্য করে রোববার হামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, সিরিয়ায় অবস্থিত অন্তত ৭৫টি আইসিস ঘাঁটিতে গোলাবর্ষণ করেছে তারা। এ নিয়ে রোববার বিবৃতিও দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বাইডেন বলেছে, ওয়াশিংটন সিরিয়ানদের পুনর্গঠনের জন্য সহায়তা করবে। তিনি বলেন, “আমরা জাতিসংঘের প্রক্রিয়ার মধ্যে আসাদ সরকার থেকে দূরে নতুন সংবিধানসহ একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম সিরিয়া গড়ার লক্ষ্যে সকল সিরীয় গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ রাখব।”
তিনি হুঁশিয়ারি দেন, বিজয়ী জোটের মধ্যে কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর ওপর নজর রাখা হবে। তার ভাষায়, “যেসব বিদ্রোহী গোষ্ঠী আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, তাদের মধ্যে কয়েকটির নিজস্ব সন্ত্রাস এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ড আছে।”
বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো উগ্রপন্থা থেকে সরে আসার যে কথা সম্প্রতি বলেছে সেটা যুক্তরাষ্ট্র “আমলে নিয়েছে” বলেও তিনি জানান। কিন্তু তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “আমারা শুধু তাদের কথা নয়, তাদের কাজ দিয়ে পর্যালোচনা করব।”
বাইডেন আরও বলেন, ওয়াশিংটন “পরিষ্কারভাবে বোঝে” যে আইসিস নামে পরিচিত ইসলামিক স্টেট চরমপন্থি গোষ্ঠী সিরিয়ায় নিজেদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য “ক্ষমতা-শূন্যতার সুযোগ ব্যবহার করতে চাইবে। কিন্তু আমরা সেটা হতে দেবো না।”
এদিকে সিরিয়ায় সরকারহীনতার সুযোগ নিয়ে গোলান মালভূমি দখল করে নিয়েছে ইসরায়েল। ১৯৭৪ সালে ওই মালভূমি নিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তিনিই ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সকে (আইডিএফ) গোলানের সিরিয়ার অংশে প্রবেশের নির্দেশ দিয়েছেন।
তার বক্তব্য, “কোনও শত্রু শক্তিকে আমরা নিজেদের সীমান্তে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে দেব না। সিরিয়ার সঙ্গে গোলান নিয়ে যে চুক্তি হয়েছিল, তা সেখানকার সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গেই ভেঙে গেছে।”