সিলেটের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। পিকেটিং ও ভাঙচুরের সময় পুলিশ বাধা দিলে বিভিন্ন স্থানে হরতাল সমর্থকরা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ায়। পিকেটারদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, শর্টগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এছাড়া সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা গাছ ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে রেখেছেন। নাশকতারোধে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীও সতর্কাবস্থায় রয়েছে। সাজোয়া যান নিয়ে তারা রাস্তায় টহল দিচ্ছে।
রবিবার সকাল ৯টার দিকে নগরীর জিন্দাবাজারে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পিকেটিং শুরু করে। এসময় তারা গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশ ও হরতাল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।
বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকেন। আর পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ছুঁড়ে ও সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায়।
সকাল সোয়া ৯টার দিকে নগরীর মহাজনপট্টির ভেতর থেকে বিএনপির ২৫-৩০ জন নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে জেলরোড পয়েন্টে এসে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। তারা পিকেটিং শুরু করে। এসময় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সকালে মহানগরের দরগাগেইট এলাকায় কয়েকটি রিকশা ভাঙচুর ও আগুন দেন পিকেটাররা। এসময় দৈনিক খবরের কাগজের আলোকচিত্রি মামুন হোসেনের মোটর সাইকেল ভাঙচুর করে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু পুলিশি তৎপরতার কারণে আগুন দিতে ব্যর্থ হয় তারা।
সকাল ৯টার দিকে মহানগরের লন্ডনি রোডের হাজীপাড়ার মুখ থেকে ৩০-৩৫ টি মোটরসাইকেলে করে হরতাল সমর্থকরা বের হয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে গিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ১০-১২টি গাড়িতে ভাঙচুর চালান। তাদের অনেকের হাতে ছিলো লাঠি। ১৫-২০ মিনিট ভাঙচুর চালিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
সকাল ১০টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের লালাবাজারে গাছ ফেলে অবরোধ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কোহিনূর আহমদ ও সহ দপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম।
এছাড়া প্রায় একই সময়ে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের তেতলিতে টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। স্থানে স্থানে পিকেটিংয়ের কারণে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক যানশূণ্য হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তার অজুহাতে পরিবহন শ্রমিকরাও সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন।
এদিকে, সিলেটে আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন যাত্রীবাহী একটি বাস ভাঙচুর করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। হরতাল উপেক্ষা করে বাসটি যাত্রী নিয়ে দক্ষিণ সুরমা টার্মিনাল থেকে জাফলংয়ের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে হুমায়ূন রশিদ চত্বরে পিকেটিংয়ের শিকার হয়।
এসময় হরতাল সমর্থনকারী নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছুঁড়ে গাড়িটি ভাঙচুর করেন বলে জানিয়েছেন জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া মাহমুদ।
জাকারিয়া মাহমুদ জানান, তার মালিকানাধীন বাস ‘আল মাহমুদ পরিবহন’ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জাফলং যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। হুমায়ূন রশিদ চত্বরে আসার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা গাড়িটি ভাঙচুর করেন। পরে বাসটি সোবহানীঘাটস্থ পেট্রোলপাম্পের সামনে এনে রাখা হয়।
এদিকে, হরতালকে কেন্দ্র করে সিলেটে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য রবিবার ভোর থেকে সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ সকল রাস্তা ও মোড়ে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মহানগরের প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও মোড়ে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। সাজোয়া যান নিয়েও তারা টহল দিচ্ছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার মো. ইলিয়াস শরীফ বলেন, ‘সিলেট নগরবাসীর সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা মাঠে রয়েছি। হরতালকে কেন্দ্র করে কেউ নাশকতার চেষ্টা করলে আমরা কঠোরভাবে তা দমন করবো। আজ ভোর থেকে আমাদের মোবাইল টিম, সিআরপি ও সাদা পোশাকে একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে পুলিশের সাজোয়া যান এপিসি।’
বিএসডি/এসএস