আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
অন্তর্বর্তী সরকার হটিয়ে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করায় উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে অর্থ সহায়তা স্থগিত করেছে বিশ্ব ব্যাংক। এদিকে, সামরিক অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় নাগরিক অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন দেশটির সরকারি মালিকানাধীন তেল কোম্পানির কর্মী, চিকিৎসক এবং বিমানের পাইলটরাও।
গত সোমবার দেশটির স্বশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে সুদানের হাজার হাজার গণতন্ত্রকামী জনতা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীর প্রাণহানি ঘটেছে।
২০১৯ সালে ব্যাপক জনপ্রিয় এক আন্দোলনে স্বৈরশাসক ওমর আল-বশির ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশটিতে গণতন্ত্র ফেরাতে গঠন করায় সামরিক-বেসামরিক নেতৃত্বের যৌথ এক সার্বভৌম কাউন্সিল। অভ্যুত্থানের হোতা জেনারেল বুরহান সোমবার দেশের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার পর এই কাউন্সিল ভেঙে দিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।
আগামী মাসে জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান নেতৃত্বাধীন দেশ পরিচালনাকারী সার্বভৌম কাউন্সিলের নেতৃত্ব বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা হ্রাস পেতো। তার আগে অভ্যুত্থান ঘটে দেশটিতে।
জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান বলেছেন, দেশকে গৃহযুদ্ধে পতিত হওয়া থেকে ঠেকাতে তিনি ক্ষমতা দখল করেছেন। একই সঙ্গে ২০২৩ সালে নির্বাচনে জয়ী বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু আফ্রিকার অন্যতম দারিদ্রপীড়িত এই দেশটিতে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বড় ধাক্কা হিসেবে বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তা ও নতুন কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণার সিদ্ধান্ত।
বশিরের শাসনের তিন দশকে আন্তর্জাতিক অর্থ-সহায়তা বঞ্চিত সুদানে গত মার্চে বিশ্ব ব্যাংক পুনরায় কার্যক্রম শুরু করে। দেশটিতে ২ বিলিয়ন অর্থ সহায়তা দেয় বিশ্ব ব্যাংক।
ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস বলেছেন, সুদানের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। দেশটির সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং উন্নয়নের ওপর এই পরিস্থিতির নাটকীয় প্রভাব পড়তে পারে। আমি এটি নিয়ে শঙ্কিত।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, তারা সুদানের বর্তমান পরিস্থিতি নজরদারি করছে। দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদককে অভ্যুত্থানের দিন আটকের পর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় সামরিক বাহিনী। তবে বুধবার তাকে মুক্তি দেওয়া হলেও রাজধানী খার্তুমে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছে।
বুধবার হামদককে দেখতে তার বাসভবনে যান ফ্রান্স, জার্মানি, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাতিসংঘ এবং সুদানে নিযুক্ত জাতিসংঘের মিশন। সেনাবাহিনীর বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া হামদক সুস্থ আছেন বলে টুইটারে জানিয়েছে জাতিসংঘের সুদান মিশন।
সূত্র: রয়টার্স।