সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের হাওর ফসল রক্ষা বাধেঁর কাজে অনিয়ম,দূর্নীতি ও নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম হলে ও শতভাগ বাধেঁর কাজ শেষ না হওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি কৃষক দল সুনামগঞ্জ জেলা শাখার আয়োজনে শহরের পুরাতন বাসস্ট্রেশন এলাকায় জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা বিএনপি ও কৃষকদলের নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব মো. আব্দুল ওয়াদুদের সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের আহবায়ক মো. আনিসুল হক। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে রাখেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এড. নুরুল ইসলাম নুরুল।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষক দলের আহবায়ক ও সাবেক তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনিসুল হক তার লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন এই জেলার ২৫ লাখ কৃষকের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন বোরো ফসলের ধান। কিন্ত প্রতিবছর এই জেলার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ফসল রক্ষার জন্য ৭২৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ক কমিটি(পিআইসির) মাধ্যমে ১৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারসহ ৫৩২ কিলোমিটার বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। কিন্তু সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী গত ২০২১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর বাধেঁর কাজ শুরু করে চলতি বছরের গত ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলে ও হাওরে এখন পর্যন্ত বাধেঁর ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ কাজ সমাপ্ত হলেও পুরোপুরি কাজ শেষ না হওয়াতে কৃষকরা তাদের কষ্টার্জিত ফলস নিয়ে শংঙ্কায় দিন কাটচ্ছেন।
তিনি আরো উল্লেখ করেন এই পিআইসি গঠনে এবং কমিটিতে প্রকৃত কৃষকদের অর্ন্তভূক্ত না করে অনেক ভূমিহীনদের দিয়ে বাধেঁ ক্লোজারসহ মাটি ফালানের কাজ এখনো চলমান রয়েছে।
আগাম বন্যার আশংঙ্কা করে তিনি বলেন এখন আবার এই বাধেঁর অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে আরো ১০দিনের সময় বাড়ানোর তৎপরতা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
হাওরপাড়ের কৃষকদের বাধেঁর কাজ আসলে লুৃটপাটের একটি মহোৎসব চলে ফলে বাধেঁর কাজে বিলম্বিত করে সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ না করার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
তিনি বলেন যে সমস্ত কৃষকদের পিআইসি কমিটিতে অর্ন্তভূক্ত করা হয় তাদের বাধঁ নিার্মণ কাজে অগ্রিম টাকা দিয়ে সময়সীমার অনেক আগেই বাধেঁর কাজ সম্পন্ন করা যেত। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদেরকে এখন পর্যন্ত দুই দফা বিল দেওয়ার কারনে পিআইসি কমিটির সদস্যরা কর্জ করে কিংবা চড়া সুদে টাকা এনে বাধেঁর কাজ করছেন। তারা সময়মতো বিল পেলে পিআইসি কমিটির সদস্যদের এখন টাকার অভাবে কাজের রয়েছে ধীরগতি। নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার আগেই দ্রতগতিতে বাধেঁর সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে সরকার ও প্রশাসনের নিকট দাবি জানান তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এড. নুরুল ইসলাম নুরুল বলেছেন, এই বাধঁ নিয়ে অনেক কেলেংকারী অতীতে ও হয়েছে বর্তমানে ও চলছে। এই বাধেঁর কাজ নিয়ে গত কয়েক বছর আগে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল তারা এই মামলায় সাঁজার পরিবর্তে মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, ফলে দোষী ব্যক্তিদের সাঁজা না পাওয়ার কারণে প্রতিবছর এই বাধেঁর সময়টাতে চলছে ব্যাপক অনিময়,দূর্নীতি,স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতি।
উপস্থিত সকল সাংবাদিকদের জাতির বিবেক ও সমাজের দর্পন উল্লেখ করে তিনি নির্ধারিত সমমসীমা অতিক্রম হওয়ার পরও কেন বাধেঁর কাজ এখনো ৬০ ভাগ সম্পন্ন হলো বাকি ৪০ ভাগ কবে সম্পন্ন হবে সেই বাধঁগুলো সরেজমিনে পরিদর্শনের আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন,দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তম টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র এবং মাছের উৎপাদন বাড়ানো এবং তাদের আবাসস্থল হিজল করচ গাছগুলো রক্ষায় সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও জেলার তাহিরপুর ও ধর্মপাশার মধ্যে অবস্থিতি এই সারি সারি হিজল ও করচ গাছের গোড়া থেকে পিআইসি কমিটির সদস্যরা বাধঁ নির্মাণে মাটি কেটে নিলে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও সাহেবগন উপািস্থত থাকলে তারা বাধা না দিয়ে কেমন নীরব ভূমিকা পালন করছেন এমন প্রশ্ন ও রাখেন তিনি। ফলে ধবংস হচ্ছে বৃহত্তম টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র এবং মাছের আবাসস্থল হিসেবে সারি সারি হিজল ও করচের বাগানগুলো । এ যেন দেখার কিংবা এই গাছগুলো সংরক্ষনে কারো উদ্যেগ নেই চোখে পড়ার মতো।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মো. রেজাউল হক,দপ্তর সম্পাদক জামাল উদ্দিন বাকের,ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অশোক তালুকদার,জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক মনাজ্জির হোসেন,জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মমিনুল হক কালার চাঁন,সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান রাজু,জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহবায়ক হাজী আকুল আলী,সিরাজুল ইসলাম পলাশ,জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম,ছাত্রদল নেতা শাহ রাহুল,কৃষক নেতা হানিফ মিয়া ও কালু মিয়া প্রমুখ।
বিএসডি/ এলএল