বর্তমান সময় ডেস্ক:
মহাবিজয়ের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির ইতিহাসের এক যুগ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে অন্তরের গহিনতম তল থেকে উচ্চারণ করেছিলেন ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না’। এই মহান বাক্যের ক্ষমতা ও অনুপ্রেরণা কতটুকু তার প্রমাণ বাঙালির বিজয়। তিনি ‘কারাগারের রোজনামচা’য় লিখেছেন— ‘এই দেশের মানুষ তার ন্যায্য অধিকার আদায় করার জন্য যখন জীবন দিতে শিখেছে তখন জয় হবেই, কেবল সময়সাপেক্ষ।’
নিপীড়িত-নির্যাতিত বাঙালি জাতির পিতা সেদিন এমন সাহসী উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন এই ভূখণ্ডের মানুষের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য দীর্ঘদিনের আত্মত্যাগের ঐতিহ্যের বিষয়টি মাথায় রেখে। অবশেষে সত্য হয় মহানায়কের কথা— অর্জন হয় বিজয়। সেই বিজয় শুধু বিজয় নয় ‘মহাবিজয়’। এ বিজয় বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে আনন্দের ও গৌরবের। জাতি সেই বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে। বিজয়ের মহোত্সবের অনুষ্ঠানমালার গতকাল ছিল প্রথম দিন। মহাবিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশবাসীকে শপথ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ প্রতিপাদ্যে গতকাল দুই দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠানমালার শুরুতে বিকাল সাড়ে ৪টায় সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পতাকা হাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে শপথবাক্য পাঠ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। রাজধানীসহ দেশের সব জেলা ও উপজেলা স্টেডিয়ামে সর্বস্তরের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শপথবাক্য পাঠ করেন। প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে সারা দেশের মানুষের সঙ্গে যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে যে শপথ পাঠ করালেন— ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতি প্রতিষ্ঠা করেছে তার স্বতন্ত্র জাতিসত্তা। আজ বিজয় দিবসে দৃপ্ত কণ্ঠে শপথ করছি যে, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। আমরা সবাই দেশকে ভালোবাসব, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করব।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলব। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।’ বাঙালি জাতি যত দিন বেঁচে থাকবে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গৌরব করবে, অহঙ্কার করবে। প্রতিটি ১৬ ডিসেম্বরে তারা নতুন করে শপথ নেবে এগিয়ে যাওয়ার, বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর। এই দিনটি আমাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় দিন, আনন্দের দিন হয়েই থেকে যাবে। কারণ শতসহস্র বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনটিতেই বাঙালি জাতি প্রথমবার প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ অনুভব করেছিল। বিশ্বের মানচিত্রে একটি গর্বিত জাতি হিসেবে নিজেদের স্থান করে নিয়েছিল বাংলাদেশ।
শক্ত হাতে বঙ্গবন্ধু সুপরিকল্পিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের লাগাম হাতছাড়া করেননি। পঁচাত্তরের দিকে মূল্যস্ফীতি কমে আসছিল। বছর শেষে বাম্পার আমন উত্পাদনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। কিন্তু উন্নয়নের এই গতি হঠাত্ করেই থেমে গেল পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের পর। বাংলাদেশের ভরসার বাতিঘর অন্ধকারাছন্ন হয়ে গেল। দেশ চলতে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ঠিক উল্টোদিকে। অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ফিরে আসে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে তারই কন্যার হাত ধরে। মহামারী সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতির এই অগ্রযাত্রাকে সেভাবে কাবু করা সম্ভব হয়নি।
বঙ্গবন্ধুর কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ ফের স্বাধীনতার ধারায় ফিরেছে, ফিরেছে উন্নয়নের ধারা। সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্য দ্রুত এগিয়ে চলেছে। শুধু অর্থনীতি নয়— বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়নও যথেষ্ট গতিশীল। এমন প্রেক্ষাপটে আমি বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সবুজ পুনরুদ্ধারের প্রশ্নে বেশ আশাবাদী। এভাবে এগোলে নিশ্চয় দেশ শত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে স্বপ্নের সোনার বাংলা অর্জনের দিকে এগিয়ে যাবে।
কিন্তু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র এখনো বন্ধ হয়নি। তাই সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করার শপথ নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে পারলেই মহাবিজয়ের মহানায়কের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া সহজ হবে এবং শহীদের রক্ত বৃথায় যাবে না। সুবর্ণজয়ন্তীর প্রধানমন্ত্রীর এই শপথ মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা। এই অনুপ্রেরণা বুকে ধারণ করে হাতেহাত রেখে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়া সম্ভব হবে।
বিএসডি/এসএফ