আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম নৃঘোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের হত্যা এবং মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি, দেশটির সাবেক সেনাপ্রধান ও বর্তমান সামরিক সরকারপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এবং সাবেক এক প্রেসিডেন্ট বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আর্জেন্টিনার একটি আদলত।
রোহিঙ্গাদের দমনে ২০১৭ সালে যে ভয়াবহ অভিযান পরিচালনা করেছিল একটি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, তাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করে আর্জেন্টিনার আদালতে মামলা করেছিল একটি আন্তর্জাতিক রোহিঙ্গা অ্যাডভোকেসি সংস্থা। ‘সর্বজনীন বিচারব্যবস্থা’ আদর্শের আওতায় করা হয়েছিল মামলাটি। শনিবার সেই মামলার ওপর শুনানি শেষে এ রায় দেন আদালত।
প্রসঙ্গত, ‘সর্বজনীন বিচারব্যবস্থা’ হলো এমন একটি আদর্শ, যার আওতায় কোনো দেশে গণহত্যা কিংবা যুদ্ধাপরাধের মতো বড় আকারের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ঘটে— সেক্ষেত্রে এই ধরনের অপরাধে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিশ্বের যে কোনো আদলতে মামলা করা যেতে পারে।
যে তিন জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত, তারা হলেন বর্তমানের জান্তাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এবং দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হিতিন কিয়াও মিয়ানমারের সাবেক রা স্টেট কাউন্সিল এবং শান্তিতে নোবেলজয়ী গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি, যিনি ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত মিয়ানমারের সরকারপ্রধান ছিলেন।
২০১৭ সালে আরাকানে কয়েকটি পুলিশ স্টেশন ও সেনা ছাউনিতে বোমা হামলা করার অভিযোগ ওঠে সশস্ত্র রোহিঙ্গাগোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) বিরুদ্ধে। এই হামলার জের ধরে বাংলাদেশ- মিয়ানমার সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে হামলা চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের সামনে টিকতে না পেরে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশসহ আশপাশের বিভিন্ন দেশে পালাতে শুরু করে। বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দল ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মিয়ানমারে জাতিগতভাবে রোহিঙ্গাদের নির্মূল করতেই ২০১৭ সালে এই গণহত্যা চালিয়েছিল দেশটির সেনাবাহিনী।
সু চির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জারির কারণ হিসেবে আদালত বলেছেন, ২০১৭ সালে যখন রোহিঙ্গাদের দমনে সেনা অভিযান চলছিল, সে সময় সরকারপ্রধান হিসেবে রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে এই নোবেলজয়ী গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী প্রায় কিছুই করেননি।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সু চির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। জেনারেল মিন অং হ্লেইং সেই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ক্ষমতা দখলের পরপরই সু চিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে বন্দি করে সামরিক সরকার। এখনও কারাগারেই আছেন তিনি।
সু চি’র বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতির মামলা চলছে মিয়ানমারের সামরিক আদালতে। সেসব মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী দেড় শ’ বছর কারাবাসের সাজা হতে পারে তার।
সূত্র : এএফপি