ঢাকা বোট ক্লাবে চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ, মামলা ও আসামি গ্রেপ্তার নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। এর মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে আরেকটি ভিডিও, যেখানে পরীমনিকে মদ্যপান করতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে এ দৃশ্য দেখা যায়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পরীমনি বোট ক্লাবের একটি চেয়াসে বসে মদ পান করছেন। সামনে একটি টেবিল, তার ওপাশে আরও কয়েকজন ব্যক্তি বসে আছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তিরা অমি ও জিমি। তারাও মদ্যপান করছিলেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, বোট ক্লাবের পরিচালনা পরিষদের সদস্য নাসির ইউ মাহমুদ পরীমনিকে মদ পান করতে নিষেধ করেন। তখন পরীমনি একটি বোতল নিতে চান। এ সময় নাসির তাকে বলেন, আপনি কোনো বিদেশি মদ নিতে পারবেন না।
ভিডিওতে দেখা যায়, পরীমনিকে উদ্দেশ্য করে নাসির বলেন, ‘হোয়াট ইজ দিস, প্লিজ স্টপ ইট, ডোন্ট ডু দিস, ইটস ঠু মাচ।’ নাসিরের উত্তরে পরীমনি বলেন, ‘অ্যাই যান তো আপনি!
ভিডিওটি ভাইরালের পর তা পর্যালোচনা করে দেখছে আইনশৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এর আগে বোট ক্লাবের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণকৃত আরেকটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছিল। ফুটেজটি ৯ জুন ঘটনার রাতের। যেখানে দেখা যায়, রাত ১২টা ২২ মিনিটে ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে একটি কালো গাড়ি দাঁড়ায়। সেই গাড়ি থেকে পরীমনি, জিমি ও অমিকে নামতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর গাড়ি থেকে বের হন বনিও। ক্লাবের রিসিপশনেও অমির সঙ্গে পরীমনিসহ অন্যদের ঢুকতে দেখা যায়।
গত ১৩ জুন রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাস দিয়ে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেন পরীমনি। স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্য চান তিনি। পরে ঘটনাটি নিয়ে বনানীতে নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, ক্লাবে নাসির তাকে মদ্যপানে অফার করেন। তিনি রাজি না হলে তাকে জোর করে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এতে করে সামনের দাঁতে আঘাত পান পরীমনি। একপর্যায়ে তাকে চড়-থাপ্পড় দেওয়া হয়। নাসিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে পরীমনি বলেন, ‘তিনি আমাকে নির্যাতন ও হত্যার চেষ্টা করেন।’
গত ১৪ জুন ঢাকার সাভার মডেল থানায় একটি মামলা করেন এ অভিনেত্রী। এতে নাসির ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। মামলার পরপরই রাজধানীর উত্তরা-১ নম্বর সেক্টরের-১২ নম্বর রোডের বাসা থেকে নাসির ও অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
গ্রেপ্তারের দিন গণমাধ্যমে নাসির নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমি কম্প্লিটলি ভিকটিম। এখানে যে ঘটনা বলা হচ্ছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। ঘটনার দিন ছিলাম। আমি ওই ক্লাবের একজন পরিচালক। আমি যখন বের হয়ে যাচ্ছি ওরা (পরীমণি ও তার বন্ধুরা) ঢোকে। তখন আমাদের সিকিউরিটি, আমাদের অফিসার, সেক্রেটারি কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তারা না থাকার কারণে তারা (পরীমণি ও তার বন্ধুরা) যখন ঢোকে তখন খুব উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছিলেন। তাদের সঙ্গে একটা ছেলে ছিল, তারা সবাই মদ্যপ অবস্থায় ক্লাবের ভেতর ঢোকে। ঢোকার পরে আমাদের বারের কাউন্টারে খুব দাবি ড্রিংকস ছিল, তারা জোর করে নেওয়ার চেষ্টা করে।’
নাসির উদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, কারণ ওইযে আমি বাধা দিয়েছি। তারা তো নিতে পারেনি। তারা তো মেম্বার না। আমি জাস্ট তাদের বাধা দিয়েছি, এটা (ড্রিংকস) নেওয়া যাবে না। নিতে হলে তোমাদের কোনো অ্যাকাউন্টের অ্যাগেইন্সটে নিতে হবে, কারণ এটা বিক্রি যোগ্য না। এটা সাথে করে নিয়ে যাওয়ার জিনিস না। এটা এখানে বসে খেতে হবে। বাই দিস টাইম আমাদের বার এখন ক্লোজড। এরপরই সে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। একটার পর একটা গ্লাস ভাঙতে শুরু করে। সে গালিগালাজ শুরু করে। আমাদের স্টাফরা তাকে (পরীমণি) থামানোর চেষ্টা করে। তাকে ওই ঘটনার আগ পর্যন্ত আমি চিনতাম না। ওই সময় আমি তাকে থামানোর চেষ্টা করি। তখন তার সঙ্গে যে ছেলেটা ছিল, সে এসে আমাকে চড়-থাপ্পড় দেয়। একটা গ্লাস মারে, আমার ঘাড়ে লাগে। এ অবস্থায় আমি আমার সিকিউরিটিদের নির্দেশ দেই, তারা তাদের (পরীমণিদের) উঠিয়ে নিয়ে যায়।’
নাসির বলেন, ‘বাই দিস টাইম সে অনেক ড্রিংকস করে ফেলেছিল। এটা আমাদের সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখবেন (সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে বলেন) যে, সে ড্রিংকস করা অবস্থায় গাড়িতে উঠতে পারছিল না। আর এটা পরের দিনই আমাদের ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী মাস্ট বি রেকর্ডেড। আমাদের কর্মকর্তারা বিষয়টি লিখিতভাবে দিয়েছে। রিপোর্টে পরিষ্কারভাবে লেখা আছে। কিন্তু আমার সাথে তার কিছুই হয়নি।’