আদালতের নির্দেশনা থাকার পরেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটার ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়েছে।
রোববার (৯ মে) মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) -এর চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এই আবেদন করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ নিজে। যেকোনো দিন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত ডিভিশন বেঞ্চে আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।
একই সঙ্গে গাছ কাটা বন্ধ করে রেস্টুরেন্টের কার্যক্রম স্থগিত এবং যে নকশার ভিত্তিতে এ কার্যক্রম করা হচ্ছে তা আদালতে দাখিল করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এর আগে এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার (৬ মে) আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ বিষয়ে নোটিশ পাঠান।
নোটিশে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, গণপূর্ত বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. শামিম আখতার এবং চিফ আর্কিটেক্ট অব বাংলাদেশ মীর মনজুর রহমানকে বিবাদী করা হয়।
নোটিশ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়। অন্যথায় প্রতিকার চেয়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু আবেদনে কোনো সাড়া না দেয়ায় আজ তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার এই আবেদন করা হয়।
নোটিশে বলা হয়েছিল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে ২০০৯ সালে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ উদ্যান সংরক্ষণে কয়েকদফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
রায়ে বলা হয়েছিল, রমনা তথা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা নিছক একটি এলাকা নয়। এই এলাকাটি ঢাকা শহর পত্তনের সময় থেকেই এ পর্যন্ত একটি বিশেষ এলাকা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে এবং এর একটি ঐতিহাসিক ও পরিবেশগত ঐতিহ্য আছে। শুধু তাই নয়, আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা আন্দোলনের কেন্দ্র এই এলাকা। এই পরিপ্রেক্ষিতেও সম্পূর্ণ এলাকাটি একটি বিশেষ এলাকা হিসেবে সংরক্ষণের দাবি রাখে। এখানে এমন কোনো স্থাপনা থাকা উচিত নয় যা এই এলাকার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বিন্দুমাত্র ম্লান করতে পারে। পরিবেশগত দিক থেকে তা আরও বিধেয় নয়। কারণ রমনার উদ্যান বা রমনা রেসকোর্স ময়দান ঢাকা শহরের দেহে ফুসফুসের ন্যায় অবস্থান করছে। কোনো ভাবেই এটাকে রোগাক্রান্ত করা যায় না।
আদালতের রায় উপেক্ষা করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যে ব্যবসায়িক স্বার্থে রেষ্টুরেন্ট/দোকান প্রতিষ্ঠার জন্য পরিবেশ ধ্বংস করে অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। যা রায়ের সম্পূর্ণ পরিপন্থি বলেও নোটিশে তুলে ধরা হয়।