পুরান ঢাকার চকবাজারে গার্মেন্টস এক্সেসরিজের ছোটখাটো ব্যবসা করেন পলাশ দাস। ২১ বছর ধরে তিনি প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচরে যান। সড়কপথে ঢাকা থেকে মাওয়া গিয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিতে হয় তাঁকে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে যখন পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানটি সংযোজন করা হচ্ছিল, তখন মাওয়ার শিমুলিয়া স্পিডবোট ঘাটে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় পলাশের। তিনি নদী পাড়ি দিতে স্পিডবোটের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। পলাশ বলেন, ‘এই কষ্টের দিন শেষ হইতাছে। স্পিডবোটে পার অইতে ২০০ টাকা লাগে। যাত্রীদের ভিড় বেশি হইলেই তা আড়াই শ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। পদ্মা সেতু চালু হইলে এই ২০০ ট্যাকার দিন শেষ অইব। আমাগো কষ্ট কমব।’
পলাশ দাস আরও জানান, স্পিড বোটে পার হতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। কিন্তু বাস থেকে নেমে আধ কিলোমিটার হেঁটে এসে বোটে উঠতে হয়। যাত্রী পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সব মিলিয়ে অন্তত এক ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে পাঁচ থেকে ছয় মিনিটেই পাড়ি দেওয়া যাবে। ঢাকা থেকে বাসে উঠবেন, আর শিবচর গিয়ে নামবেন। পদ্মা সেতু ঘিরে এমন সুখের স্বপ্ন দেখছেন পলাশ দাস।
পলাশ দাসের মতো কথা হলো শরীয়তপুরের বাসিন্দা ও মুদি দোকানের কর্মী বিল্লাল মিয়ার সঙ্গে। তিনিও বাড়ি যাচ্ছেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হলেও ভোগান্তি কমবে।
পলাশ দাস ও বিল্লাল মিয়ার মতো পদ্মার ওপারের জেলা মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, খুলনা, বরিশালসহ গোটা দক্ষিণবঙ্গের মানুষের অপেক্ষার পালা যেন শেষ হচ্ছে। ফেরিঘাটের ভোগান্তি ও বাড়তি ভাড়ায় নাকাল হতে হবে না তাঁদের।
জানা গেছে, শিমুলিয়া থেকে কাওড়াকান্দি-কাঁঠালবাড়ি যেতে লঞ্চে ভাড়া ৩৫ টাকা। সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। সীমিত আয়ের মানুষের পছন্দ লঞ্চ। প্রতি ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পরপর লঞ্চ ছাড়ে। আজ সকাল নয়টায় লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের বেশ আনাগোনা। তাঁরা লঞ্চের অপেক্ষা করছেন। কুয়াশার মধ্যেও নদী পারাপারের লোকের অভাব নেই। পদ্মা সেতু হলে লঞ্চে নদী পার হতে হবে না। তারা বাসে চড়ে নিমেষেই পাড়ি দেবেন প্রমত্তা পদ্মা।
এদিকে পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো নিয়েও বেশ আগ্রহ দেখা গেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাওয়ার কুমারভোগ এলাকার শামসুল ইসলামের চায়ের দোকানে যেতেই দেখা গেল কয়েকজন গল্প করছেন। আড্ডায় যোগ দিতেই শামসুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে এলাকা বদলে গেছে।
এদিকে পদ্মা পাড়ি দিতে মাওয়া প্রান্তে দুই কিলোমিটার ট্রাকজট লেগেছে। শিমুলিয়া ফেরিঘাটের তিন রাস্তার মোড় থেকে কুমারভোগ পর্যন্ত ফেরিতে ওঠার জন্য ট্রাকের সারি। শিমুলিয়া ফেরিঘাটের তিন রাস্তা মোড়ে গত মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক নিয়ে অপেক্ষাধীন চালক আবদুল কুদ্দুস। কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ঢেউটিন নিয়ে খুলনা যাচ্ছেন। তিনি প্রথম আলোকে জানান, সড়ক থেকে ফেরিঘাটের পার্কিং গিয়ে আরও অন্তত দুই দিন অপেক্ষা করতে হবে সিরিয়াল পেতে। সব মিলিয়ে পাঁচ দিন লাগবে পদ্মা পাড়ি দিতে। গুনতে হবে ১ হাজার ৮৫০ টাকা। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে পাঁচ দিনের এই পথ পাঁচ মিনিটেই শেষ হবে।