জবি প্রতিনিধি:
জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান দিবস ২০২২ এ রক্তদানে উদ্বুদ্ধকরণে ঢাকায় ৩৪ কিলোমিটার সাইক্লিং করলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী অমৃত রায়। ২১ কিলোমিটার সাইক্লিং করার কথা থাকলেও পর্যায়ক্রমে ক্যাম্পিং এর স্থান বেড়ে তা ৩৪ কি.মি. হয়ে যায়। ঢাকা জন সমাবেশপূর্ণ স্থান গুলো যেমন, গুলিস্তান, সদরঘাট, কমলাপুর বাসস্ট্যান্ড, কমলাপুর রেলস্টেশন, শিল্পকলা একাডেমি, শাহবাগ, টি.এস.সি ও শহীদমিনারে সচেতনতা ক্যাম্পিং করা হয়।
মানুষের মহামূল্যবান জীবন ও দেহ সুরক্ষায় রক্ত অতি গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশকীয় উপাদান। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে শতকরা ৮ ভাগ (৫-৬ লিটার) রক্ত থাকে যা আমাদের দেহের জ্বালানী স্বরূপ। কৃত্রিমভাবে শরীরে রক্ত উৎপাদনের আপাতত কোন পন্থা নেই, তবে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে রক্ত দিয়ে বাঁচতে সাহায্য করতে পারে।
সারাবিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১৪ কোটি ১০ লক্ষ ইউনিট রক্ত স্বেচ্ছায় দান করা হয়, এর ৩৮ শতাংশ সংগ্রহ করা হয় উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে। ক্যান্সার, থ্যালাসেমিয়া কিংবা অন্যান্য রক্ত সংক্রান্ত যে কোন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাঝে স্বেচ্ছায় রক্তদানের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ‘২ নভেম্বর’ জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ৬ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হলেও এর মাত্র ২৫% আসে স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতাদের মাঝ থেকে। ৫০% রিপ্লেসমেন্ট ডোনার বা আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবদের মাধ্যমে এবং বাকি ২৫% পেশাজীবি রক্তদাতাদের কাছ থেকে সংগৃহীত হয়।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বছরে পাঁচ থেকে সাত লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়, যার মাত্র ৩১ ভাগ পাওয়া যায় স্বেচ্ছায় রক্তদাতার মাধ্যমে। বাকি রক্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে পেশাদার রক্তদাতা এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। ১৮ থেকে ৬৫ বছরের যে কোনো সুস্থ ব্যক্তি, যার শরীরের ওজন ৪৫ কেজির উপরে, তারা চার মাস পর পর নিয়মিত রক্তদান করতে পারেন। তবে রক্ত দিতে হলে কিছু রোগ হতে মুক্ত থাকতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ অনুযায়ী নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের জন্য রক্তদাতার শরীরে কমপক্ষে পাঁচটি রক্তবাহিত রোগের অনুপস্থিতি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া দরকার। এ রোগগুলো হলো- হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, এইচআইভি বা এইডসের ভাইরাস, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিস। এসব রোগের স্ক্রিনিং করার পরই সেই রক্ত রোগীর শরীরে প্রবেশের উপযুক্ত ঘোষণা করা যায়। অবশ্য একই সঙ্গে রোগীর রক্তের সঙ্গে রক্তদাতার রক্তের গ্রুপিং এবং ক্রসম্যাচিং করতে হয়।
এ ছাড়া রক্তদাতা শারীরিকভাবে রক্তদানে উপযুক্ত কিনা তা জানার জন্য তার শরীরের ওজন, তাপমাত্রা, নাড়ির গতি, রক্তস্বল্পতা বা জন্ডিসের উপস্থিতি ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখা হয়।
স্বেচ্ছায় রক্তদান দিবসের আজকের ক্যাম্পিং এ জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ ও রক্তদানে উৎসাহী করাই ছিল মূল লক্ষ্য।
এ বিষয়ে জবি শিক্ষার্থী অমৃত রায় বলেন, “২১ কিলোমিটার প্ল্যান থাকলেও সাইক্লিং হলো ৩৪ কিলোমিটার। বেশ মন্দ নয়। অনেক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছি। কারো কারো কাছে চলেছে প্রশ্নত্তোর পর্ব। মানুষের মনে রক্তদানের ভীতি কতটা কমাতে পেরেছি জানি না তবে কারো কারো মনে উৎসাহ জন্মাতে পেরেছি যারা কথা দিয়েছে রক্ত দেওয়ার।”
রক্তদান পূন্যের কাজ, সকলকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের প্রাণ বাঁচাতে রক্তদান দিবসে সকল রক্তযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা।
বিএসডি/এফএ