নিজস্ব প্রতিনিধি:
পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের এ বছরের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় আর বসতে হচ্ছে না। এর পরিবর্তে নিজ নিজ স্কুলেই বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে মুল্যায়ন করে তাদের ষষ্ঠ শ্রেনীতে উন্নীত করা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এবারের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা না নেওয়ার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো হলে, তিনি তাতে সম্মতি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে রোববার প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সংক্রান্ত নথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসে পৌঁছেছে। আজ-কালের মধ্যে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করবে এ মন্ত্রণালয়।
করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ ১৭ মাস টানা ছুটির পরে গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজের সঙ্গে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও খুলে দেওয়া হয়। সেই থেকে রোববার পর্যন্ত মাত্র ২৯ কার্য দিবস পার হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর। এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ৬ দিন এবং সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে মাত্র একদিন ক্লাস করেছে। ২ অক্টোবর থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে মাত্র দুদিন করে ক্লাস করতে শুরু করেছে। তবে এই গুটি কয়েক ক্লাস করে সারা বছরের সিলেবাস পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা সাধারণত প্রতিবছর নভেম্বরের মাঝামাঝি নেওয়া হয়। তবে করোনার কারণে গতবছর এ পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। আর সিলেবাস শেষ না হওয়ায় এবছরের পরীক্ষাও বাতিল করতে চাইছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য রোববার এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
গত ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মোহাম্মদ হাসিবুল আলমের সই করা সারসংক্ষেপে বলা হয়- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ প্রচলন করা হয়। শিক্ষাবর্ষের শেষে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। করোনা ভাইরাস সংক্রমণজনিত কারণে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ হতে ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। গত ৫ সেপ্টেম্ববর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শ্রেণিকক্ষে সীমিত আকারে পাঠদান কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এই সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘ঘরে বসে শিখি’ শিরোনামে পাঠদান কার্যক্রম সম্প্রচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বেতারের মাধ্যমেও পাঠদান সম্প্রচার করা হচ্ছে। পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ওয়ার্কশিট প্রণয়ন করে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। শিক্ষকগণ গুগল-মিট অ্যাপসের মাধ্যমে পাঠদান করেন। হোম ভিজিটের মাধ্যমে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সহায়তা করেন এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে পাঠদান বিষয়ে যোগাযোগ করেন। শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণের জন্য প্রণীত Accelerated Remedial Learning পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষকগণ শ্রেণিকক্ষে সরাসরি পাঠদান করছেন। সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করে কোডিড-কালীন পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হচ্ছে।
এতে বলা হয়, শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানো কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণের জন্য প্রণীত পরিকল্পনা শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তা কর্তৃক বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০২১ শিক্ষাবর্ষের মাত্র ২/৩ মাস অবশিষ্ট আছে। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি ও মুদ্রণ; দেশব্যাপী একযোগে এই পরীক্ষা পরিচালনা করা; এবং নির্ধারিত সময়ে ফল প্রকাশ করা কষ্টসাধ্য হবে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত পরিস্থিতির কারণে গত ২০২০ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা এবং ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা সম্পন্ন করা এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে না।
উল্লেখ্য, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অনুরোধে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে শুধুমাত্র ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা পরিচালনা করা হয়।
সারসংক্ষেপে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা এ বছর না নিয়ে বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়েছিল, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এবং শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানো কার্যক্রম বিবেচনাক্রমে ২০২১ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণের পরিবর্তে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে তাদেরকে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীতকরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে।অবশেষে রোববার এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি মিললো।