নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন নির্বাচন বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সদস্যরা। একই সঙ্গে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধাভোগীদের শাস্তি চেয়েছেন তারা। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে এ সংক্রান্ত আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, নির্বাচন বাতিল ও প্রশাসক নিয়োগ চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ও সচিব এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর অন্তত পাঁচটি চিঠি দিয়েছেন বারভিডার সদস্যরা। চিঠিতে তারা উল্লেখ করেছেন, বর্তমান বারভিডা কমিটির মেয়াদ ২৯ জুন শেষ হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বারভিডায় নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচনে স্বৈরাচারের দোসররা প্রার্থী হয়েছেন। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্রহত্যা মামলার আসামিও গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রার্থী হয়েছেন।
বারভিডার সদস্যদের অভিযোগ, পতিত সরকারের দোসররা দ্রুত ক্ষমতায় আসীন হতে বেআইনিভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। এ কমিশন বাতিল করে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনপূর্বক নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আসন্ন বারভিডা নির্বাচনে সেক্রেটারিপ্রার্থী রিয়াজ রহমানের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ফিরোজা বেগম নামের এক নারীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে রাজধানীর কাফরুল থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। ওই মামলার এজাহারনামীয় ১৬ নম্বর আসামি রিয়াজ রহমান পুলিশের কাছে পলাতক হলেও বারভিডায় সেক্রেটারি প্রার্থী হিসেবে তার সরব উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। এ মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম রয়েছে।
‘বাণিজ্য সংগঠন আইন- ২০২২ এর ধারা ১৪ অনুযায়ী, বারভিডার বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয় গত ২৮ জুন। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সংগঠনের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে বেআইনিভাবে মেয়াদ বৃদ্ধি করে এবং সহকারী প্রশাসক নিয়োগ না করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে তিন দফায় মোট আট মাস মেয়াদ বর্ধিত করা হয়। যা বাণিজ্য সংগঠন আইনের পরিপন্থি।’
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ৫ আগস্ট দেশের পটপরিবর্তনের আগে এফবিসিসিআইসহ বারভিডাকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন সাবেক সভাপতি আব্দুল হক। এ ছাড়া স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে বারভিডার বর্তমান নেতাদের বিরুদ্ধে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাননি সাধারণ সদস্যরা। তাই শেখ হাসিনার দোসরদের দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
জানা যায়, গত ২ অক্টোবর বারভিডার ২০২৪-২৬ দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন বোর্ড। নির্বাচনে ‘গণতান্ত্রিক পরিষদ’ নামে বিগত সরকারের দোসর হিসেবে পরিচিতরা অংশ নিচ্ছেন। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগিতায় নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন তারা। নির্বাচনে সভাপতি পদে আব্দুল হক ও সেক্রেটারি পদে রিয়াজ রহমান প্রার্থী হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, সভাপতি প্রার্থী হকস বে’র মালিক আব্দুল হক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মংলা বন্দর দিয়ে প্রায় ৭০০ ইউনিট গাড়ি আমদানি করে সেগুলো ব্যবহার না করে নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে। ওই সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে ৯০ শতাংশ অবচয় সুবিধা নিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করেছেন তিনি। এ ছাড়া এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক থাকাকালে ৭০০টি গাড়ি বিশেষ সুবিধায় বের করে এনে সরকারের অন্তত ৫০ কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছেন আব্দুল হক।
এ ছাড়া রিয়াজ রহমান রমনা থানা আওয়ামী লীগের নেতা বলেও জানান বারভিডার সদস্যরা। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।