অসহায় পঙ্গু বাবাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি নেয়ার পথে গাড়ি থেকে নামিয়ে মহাসড়কের পাশে হুইল চেয়ারে বসিয়ে ফেলে রেখে চলে যান ছেলেরা। ১০ দিন পার হয়ে গেলেও তার ৪ সন্তানের কেউই নিতে আসেনি তাকে। রোদ, বৃষ্টি, ধুলাবালি আর রাতের মৃদু কুয়াশার মধ্যেই গত ১০ দিন ধরে মহাসড়কের পাশেই পড়েছিলেন অসহায় ওই বাবা।
পরে কেউ একজন ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করলে বিষয়টি নজরে আসে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীলের। তিনি লোক পাঠিয়ে বৃদ্ধ লোকটিকে উদ্ধার করে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। বিষয়টি জেনে জাপান প্রবাসী কুমিল্লার যুবক কেএম আমির হোসেন লোক পাঠিয়ে তার জন্য খাদ্য ও বস্ত্র পাঠান। বৃদ্ধ ওই লোকটির গোসল, খাবার এবং ওষুধ খাওয়ানোর জন্য একজন লোক রেখেছেন তিনি। বর্তমানে ওই বৃদ্ধ তাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, গত ৫ অক্টোবর রাত থেকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বড় গোবিন্দপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ১০ দিন ধরে ওই বৃদ্ধ পড়েছিলেন। প্যারালাইসের কারণে তিনি হাঁটাচলা করতে পারেন না। অস্পষ্ট ভাষায় শুধু জানান, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। তার নাম সাত্তার। তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তার। বড় ছেলে হারুন, মেজো ছেলে মঈন, ছোট ছেলে জসিম। তবে বৃদ্ধের ছেলেদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বৃদ্ধ সাত্তার বলেন, আমার ছেলেরা ঢাকার একটি হাসপাতালে আমাকে চিকিৎসা করায়। চিকিৎসা শেষ করে বাড়ি যাওয়ার পথে এখানে (চান্দিনার বড় গোবিন্দপুর বাসস্ট্যান্ড) নামায় দেয়। এখানে রেখে বলে পরে নিয়ে যাবে, আমি যেন এখানেই থাকি।
ছেলেরা আসবে এই আশায় গত ১০ দিন ধরে অপেক্ষায় আছেন বৃদ্ধ এই বাবা। কেউ কোনো প্রশ্ন করলে তিনি বলছেন, আমার ছেলেরা আমাকে নিয়ে যাবে। আমাকে এখানে অপেক্ষা করতে বলেছে। আমি এখানেই থাকব। ওরা আসবে। আমাকে নিয়ে যাবে বাড়িতে।
বড় গোবিন্দপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার একাধিক স্থানীয় দোকানদার বলেন, গত ৬ অক্টোবর সকালে বাসস্ট্যান্ডে এসে আমরা দেখি প্রচুর মানুষ ভিড় করেছে। গিয়ে দেখি মাঝখানে হুইল চেয়ারে বসা এক পঙ্গু বৃদ্ধ। সবার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে অঝোরে দুই চোখের পানি ঝরাচ্ছেন। তখন সবার কাছে ঘটনা বললেন যে, আগের রাতে এখানে তার ছেলেরা তাকে নামিয়ে রেখে চলে যায়। বলেছে নিতে আসবে, কিন্তু আসেনি। তারপর থেকে তিনি বেশ কয়েকদিন এই রাস্তার পাশেই পড়ে ছিলেন।
ঘটনার বিষয়ে জাপান প্রবাসী কেএম আমির হোসেন ঢাকা পোস্টকে মোবাইল ফোনে বলেন, একজনের ফেসবুকে পোস্টটি দেখে আমি আমার গ্রামের একজনকে ফোন করে ঘটনাটি জানাই। তাকে বলেছি যত দ্রুত সম্ভব ওই বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে। যত টাকা লাগে সব আমি বহন করব। পরে ওই বৃদ্ধকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়। তার খাবার, পরনের জন্য লুঙ্গি, গেঞ্জি, গামছা, সাবানসহ যাবতীয় সবকিছু কিনে দেওয়া হয়েছে। ৪১২ নম্বর কেবিনে ভর্তি আছেন তিনি। আমার লোক তিনবেলা খাবার দিয়ে আসছে। গোসল করিয়ে খাবার খাইয়ে ওষুধও খাইয়ে দিচ্ছে। আমি ঘোষণা দিয়েছি যতদিন উনার একটা ব্যবস্থা না হবে ততদিন আমি আছি তার পাশে।
চান্দিনা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দিন খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি একজনের কাছে শোনার পর ওই লোকটির বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি জানার পর বৃদ্ধ ওই লোকটিকে উদ্ধার করে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
বিএসডি / এলএম