ডেস্ক রিপোর্ট
১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট; তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ক্ষুদিরাম বসুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল। তার এই অকাল আত্মত্যাগই ছিল গোটা উপমহাদেশের মুক্তির অন্যতম প্রেরণা। প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্বব্যাপী পালিত হলো স্বাধীনতা সংগ্রামী শহিদ ক্ষুদিরামের ১১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী।
আসুন এক নজরে জেনে নিই শহিদ ক্ষুদিরাম বসু সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য :
* ১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারতের মেদিনীপুর জেলার কেশপুর থানর মৌবনী গ্রামে জন্ম ক্ষুদিরাম বসুর। বাবা ত্রৈলোক্যনাথ বসু আর মা লক্ষ্মীপ্রিয় দেবী।
* তিন মেয়ের পর তিনি মায়ের চতুর্থ সন্তান। বড় দুই ছেলে অকাল মৃত্যুর পর ছোট ছেলের মৃত্যুশঙ্কায় তখনকার সমাজের রীতি অনুযায়ী নিজের সন্তানকে বড় মেয়ের কাছে তিন মুঠো খুদের (চালের খুদ) বিনিময়ে বিক্রি করে দেন ক্ষুদিরামের বাবা-মা। মূলত খুদের বিনিময়ে কেনা হয়েছিল বলে শিশুটির নাম রাখা হয়েছিল ‘ক্ষুদিরাম’।
* শিক্ষা জীবনে তমলুকের হ্যামিল্টন স্কুল এবং মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে লেখাপড়া করেন ক্ষুদিরাম বসু।
* একটু বড় হলেই বিপ্লবী রাজনৈতিক দল যুগান্তরে যোগ দেন অকুতোভয় এই সৈনিক।
* ক্ষুদিরামকে সেই দলে কাজের অংশ হিসেবে ‘সোনার বাংলা’ শীর্ষক বিপ্লবাত্মক ইশতেহার বিলি করার সময় গ্রেফতার করা হয়।
* ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকির এক সঙ্গে মিলে গাড়িতে ব্রিটিশ বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড আছে ভেবে তাকে গুপ্তহত্যার জন্যে শক্তিশালী বোমা ছুঁড়েছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড অন্য গাড়িতে থাকায় তখন গাড়িটির অবস্থানরত দুই ব্রিটিশ মহিলার মৃত্যু হয়। একজনের নাম মিসেস কেনেডি ও অপর জন তার মেয়ে।
যদিও প্রফুল্ল চাকি নিজের গ্রেফতারে অনেক আগেই আত্মহত্যা করেন। তবে গ্রেফতার হন ক্ষুদিরাম এবং দুজন মহিলাকে হত্যা করার জন্যে তার বিচার কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ বিচার কাজ শেষে চূড়ান্তভাবে তার ফাঁসির আদেশ দেন ব্রিটিশ আদালত।
* বোমা হামলা চালানোর পর ক্ষুদিরাম প্রায় ২৫ মাইল পায়ে হেঁটে ওয়াইনি নামে এক স্টেশনে পৌঁছে চায়ের দোকানে এক গ্লাস পানি চেয়েছিলেন। আর সেখানেই তিনি ফতে সিং এবং শিউ প্রসাদ সিং নামে দুই কনস্টেবলের মুখোমুখি হন। পরবর্তীতে সেখানকার থানায় তাকে চিরদিনের মতো আটক করা হয়। পরে ওই রেল স্টেশনের নাম বদলে রাখা হয় ‘ক্ষুদিরাম বোস পুসা স্টেশন’।
* ক্ষুদিরামের বিচার শুরু হয় ১৯০৮ সালের ২১ মে, যা ‘আলিপুর বোমা মামলা’ নামে পরিচিত। মামলার বিচারক ছিলেন মি. কর্নডফ এবং দুজন ভারতীয় লাথুনিপ্রসাদ ও জানকীপ্রসাদ।
* রায় শোনার পর ক্ষুদিরামের মুখে হাসি দেখা গেছে। তার বয়স খুবই কম হওয়ায় বিচারক কর্নডফ প্রশ্ন করেন, ‘তোমাকে যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মরতে হবে সেটা কি তুমি বুঝেতে পেরেছ?’ এ সময় ক্ষুদিরাম মুচকি হাসি দিলে বিচারক তাকে আবারও প্রশ্নটি করেন। তখন অকুতোভয় এই বীর বলে ওঠেন, ‘বন্দেমাতরম’।
* ১৯০৮ সালের ২ মে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘দ্য স্টেটসম্যান’ এক প্রতিবেদনে লিখেছিল: একটা ছেলেকে দেখার জন্য স্থানীয় রেল স্টেশনে অনেক লোকের ভিড় জমে যায়। কিশোরটির বয়স ১৮ কিংবা ১৯ বছরের হলেও তাকে রীতিমত দৃঢ় দেখাচ্ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম শ্রেণির এক রেল কামরা থেকে বেরিয়ে সে হেঁটে আসছিল এক উৎফুল্ল কিশোরের মতো; যে কোনো ধরনের উদ্বেগ জানেনা….গাড়িতে নির্দিষ্ট আসনে বসার সময় ছেলেটা চিৎকার করে বলে উঠল ‘বন্দেমাতরম’।
উল্লেখ্য, ফাঁসিতে ঝোলানোর সময় ক্ষুদিরাম বসুর বয়স হয়েছিল মাত্র ১৮ বছর, ৭ মাস এবং ১১ দিন। তার এই অকাল প্রয়াণ গোটা ভারতীয় উপ মহাদেশ গর্বের সঙ্গে স্মরণ করে।
বিএসডি/এমএম