সরকারি ও বেসরকারি উৎস থেকে বাড়তি দামে বিদ্যুৎ কেনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। গত ১১ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১০ বার। এতে পাইকারি বিদ্যুতের দাম ১১৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আর খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ। বাকি ঘাটতি মেটাতে প্রতিবছর ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।
আজ সোমবার ‘জ্বালানি রূপান্তরে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা: বিদ্যুৎ খাত’ শিরোনামে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন (ক্যাব)-ভোক্তাকণ্ঠ আয়োজিত ওয়েবিনারের মূল নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়। বেলা এগারোটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত চলে আলোচনা।
এতে বলা হয়, ফ্রিকোয়েন্সি ও ভোল্টেজের ওঠা-নামা, ঘন ঘন এবং অপ্রত্যাশিত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানসম্মত বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না ভোক্তারা। দামের দিক থেকেও দুইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাঁরা। বাড়তি দামে বিদ্যুৎ কিনছেন। আবার তাঁদের করের টাকা থেকে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার।
ক্যাবের নিবন্ধে বলা হয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) অন্যায্য মূল্যবৃদ্ধির প্রতিকার পাচ্ছেন না ভোক্তারা। ভুতুড়ে বিলসহ অন্যান্য গ্রাহক হয়রানিরও প্রতিকার নেই কমিশনে। বাড়তি দামে নিম্নমানের সেবা পাচ্ছেন বিদ্যুৎ গ্রাহকেরা
এতে আরও বলা হয়, নিয়ম অনুযায়ী গণশুনানি করেই প্রতিবার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গণশুনানিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বদলে উল্টো কমানোর পথ বাতলে দেওয়া হয় ভোক্তাদের পক্ষ থেকে। কিন্তু সেসব পরামর্শ বরাবরের মতো উপেক্ষিত থেকেছে। কমিশনে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়ে ভোক্তারা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। সেখানে দায়ের করা মামলার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওয়েবিনারে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সংকটাপন্ন বিদ্যুৎ খাতের উত্তরণ ঘটেছে গত এক দশকে। তবে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সুশাসনের অভাব ব্যাপক। এ খাতে দুর্নীতি, অনিয়ম, অপচয় দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত সম্মিলিতভাবে সোচ্চার থাকতে হবে।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, সঠিক দাম ও মানে বিদ্যুৎ বা জ্বালানি পাওয়া ভোক্তার অধিকার। একই সঙ্গে পরিবেশ রক্ষার দিকটিও সংবিধান নিশ্চিত করেছে। কমিশনের দায়িত্ব ছিল, ভোক্তা অধিকার রক্ষা করা। দুর্নীতির জন্য প্রকৃত দামের চেয়ে দুই থেকে আড়াই গুণ দামে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, দুর্নীতি, অপচয়, অদক্ষতা রাষ্ট্র দূরে করতে পারছে না। অথচ বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সরকার ইনডেমনিটি আইন করে রেখেছে। এ আইন থাকা উচিত নয়।
ভোক্তাকণ্ঠ সম্পাদক কাজী আবদুল হান্নান ও ক্যাব সংগঠক সৈয়দ মিজানুর রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান। লিখিত নিবন্ধে বলা হয়, পিডিবি ভেঙে দুটি কোম্পানি হওয়ায় জনবল বাবদ ব্যয় বেড়েছে। তারা যে তথ্য-উপাত্ত দেয়, তাতে এই ব্যয়ের বিষয়গুলো দেখায়। কিন্তু অনিয়মের অনেক খবর আড়ালে থেকে যাচ্ছে।
নিবন্ধে বলা হয়, ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম কত হবে, তার সিংহভাগ নির্ভর করে পিডিবি কত দামে বিদ্যুৎ কিনছে, তার ওপর। অথচ বিদ্যুতের অবকাঠামো নির্মাণ ও সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কমিশনের কোনো প্রত্যক্ষ প্রভাব নেই।
এতে আরও বলা হয়, বিদ্যুৎ খাতের সব আর্থিক ঘাটতি পিডিবিতে কেন্দ্রীভূত করা হচ্ছে। পিডিবি সব উৎস থেকে বিদ্যুৎ কিনে বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে পৌঁছে দেয়। কোম্পানি আইনে পরিচালিত সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোকে লাভ দিয়ে পিডিবিতে সব ঘাটতি কেন্দ্রীভূত করা হচ্ছে। এই লাভের আগে দুর্নীতি, অদক্ষতা ইত্যাদি বাবদ যে অতিরিক্ত ব্যয় হয়, তা–ও দিতে হয়। আবার ধীরে ধীরে পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা কমানো হচ্ছে। বিপরীতে বেসরকারি কোম্পানি ও তথাকথিত রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিসমূহের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।