‘ইনস্টিটিউট অব টিস্যু ব্যাংকিং বায়োমেটেরিয়াল রিসার্স সেবা ও গবেষণা সুবিধাদির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর হতে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশন।
সূত্র জানায়, সেবা ও গবেষণা কার্যক্রমের আওতায় ইনস্টিটিউট অব টিস্যু ব্যাংকিং অ্যান্ড বায়োমেটেরিয়াল রিসার্চ (আইটিবিবিআর) প্রস্তুত করে মানব টিস্যু গ্রাফট দেশের শতাধিক হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো পুনর্বাসন শল্য চিকিৎসায় ব্যবহারের উদ্দেশ্য নিয়মিতভাবে সরবরাহ করে আসছে। টিস্যু গ্রাফট আইটিবিবিআর গবেষণাগারে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন অনুসরণ করে টিস্যু প্রক্রিয়াজাতকরণ, রেডিয়েশন স্টেরিলাইজেশন, মাইক্রোবায়োলজিক্যাল কোয়ালিটি কন্ট্রোল এবং টিস্যু গ্রাফটের সংরক্ষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। চলমান টিস্যু গ্রাফট সরবরাহ সেবা দেওয়ার পাশাপাশি আইটিবিবিআর নতুন সেবা সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলির ওপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত নিউরো-ক্রিনিয়াল অটোগ্রাফট আইটিবিবিআর গবেষণাগারে প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পারমাণবিক বিকিরণ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে জীবাণুমুক্তকরণ শেষে, সরবরাহের জন্য নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়। গত কয়েক বছর যাবৎ এই নিউরো-ক্রেনিয়াল অটোগ্রাফটিং সেবা গ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে। আইটিবিবিআর থেকে টিস্যু গ্রাফট সরবরাহের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যাও গত বছরগুলোতে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলমান সেবার ক্রমোন্নতির পাশাপাশি আইটিবিবিআরের গবেষণা কার্যক্রমও যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক এবং এখানকার গবেষণালব্ধ ফলাফল দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।
মানব টিস্যু ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড পরমাণু প্রযুক্তি নির্ভর, স্থায়ী ও জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি জড়িত অত্যাবশ্যকীয় কার্যক্রম। আইটিবিবিআর-ই দেশের একমাত্র মানব টিস্যু ব্যাংক। পরমাণু প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ায় সংশ্লিষ্ট পারমাণবিক স্থাপনার ভিতরে টিস্যু ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা আবশ্যক। দেশে বিভিন্ন ধরনের টিস্যু গ্রাফটের ক্রমবর্ধমান চাহিদার জন্য বর্তমান ল্যাবরেটরি অবকাঠামোতে টিস্যু গ্রাফট সরবরাহ কষ্টসাধ্য। তাই হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো টিস্যু গ্রাফটের চাহিদা মেটাতে ইনস্টিটিউট অব টিস্যু ব্যাংকিং অ্যান্ড বায়োমেটেরিয়াল রিসার্চের সেবা ও গবেষণা সুবিধাদির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে— একটি গবেষণা ভবন নির্মাণ, সাব-স্টেশন এবং জেনারেটর ভবন, বহিঃস্থ আরসিসি রাস্তা, কংক্রিট পেভমেন্ট ও কার পার্কিং, ৬৩৭টি গবেষণা সরঞ্জাম, ৩টি মোটরযান, এসি ২২০ টন ও দুটি লিফট, ৮৪৯টি আসবাবপত্র, নিরাপত্তা সামগ্রী ক্রয় এবং জনবলের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া।
এ ছাড়া মানব টিস্যু ব্যাংক প্রতিষ্ঠা প্রকল্পে বৈদেশিক শিক্ষা সফরে যাবেন কর্মকর্তারা। এ জন্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা। তবে এই টাকায় কতজন কর্মকর্তা বৈদেশিক প্রশিক্ষণ নেবেন সেটি জানা যায়নি।
প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) নাসিমা বেগম কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘প্রস্তাবিত প্রকল্পটির আওতায় পরমাণু প্রযুক্তি প্রয়োগে দেশে মানব স্বাস্থ্য সেবায় টিস্যু ব্যাংকিং কার্যক্রম বিস্তৃত ও আধুনিকীকরণ করা হবে। এ জন্য হিউম্যান মডেল টিস্যু ব্যাংক স্থাপন, পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানব টিস্যুও জীবাণু সংক্রমণ বিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা পরিচালনা; পরমাণু প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রস্তুত করা থেরাপিউটিক মানব কল্যাণে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে গবেষণা পরিচালনা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ সব বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।’