স্পোর্টস ডেস্ক
বিশ্বক্রিকেটের অন্যতম বড় নাম, পেয়েছেন প্রায় সকল বৈশ্বিক সাফল্য। আক্ষেপ ছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা আইপিএলের ট্রফি নিয়ে। ভারতীয় তারকা বিরাট কোহলি ১৮ বছরের সেই আক্ষেপ অবশেষে ঘুচালেন। যেখানে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে ২০০৮ সালে আইপিএলের জন্মলগ্ন থেকেই খেলে আসছেন কোহলি। আগের তিনবার হৃদয় ভেঙেছে, চতুর্থবার ফাইনাল খেলতে নেমে চ্যাম্পিয়ন হলেন অবশেষে।
পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে গতকাল (মঙ্গলবার) ফাইনালে নামার আগেই আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের গ্যালারি বেঙ্গালুরুর রং ধারণ করে। যেন সবাই ছুটে এসেছিলেন একটি দল ও তাদের বড় তারকা কোহলির জয় দেখতে। ম্যাচ শেষের অনেকটা সময় বাকি থাকতেই জয়ের পাল্লাটা বেঙ্গালুরুর দিকে ঝুঁকে ছিল। ছিল কেবল শেষ ঘণ্টার অপেক্ষা। কী ঘটতে চলেছে আঁচ করতে পেরে চার বল বাকি থাকতেই কোহলি কান্না শুরু করেন। শেষ বল হওয়ার পরই হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসে পড়লেন তিনি। চোখ ঢাকলেন দুই হাতে।
৬ রানের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর পরম প্রাপ্তির আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলেন কোহলি। পাশ থেকে দুই সতীর্থের পিঠ চাপড়ানি, গোটা মাঠের গর্জন, সতীর্থদের পাগলপারা উচ্ছ্বাস— কিছুই যেন ছুঁতে পারছিল না। ঘোর কাটিয়ে কিছুক্ষণ পরই জানালেন, ‘একজন স্পোর্টসম্যান হিসেবে আমরা এমন মুহূর্তের জন্য প্রবল অপেক্ষায় থাকি, এটি বর্তমান বিশ্বক্রিকেটে উচ্চ মানসম্পন্ন টুর্নামেন্টগুলোর একটি। আমি সবসময়ই বড় টুর্নামেন্ট ও বড় মুহূর্তের অংশ হতে চেয়েছি। কিন্তু এটি (আইপিএল শিরোপা) অপূর্ণ ছিল এবং আজ রাতে আমি শিশুদের মতো ঘুমাব।’
অবশ্য অপেক্ষাটা কেবল কোহলিরই ছিল না, দীর্ঘ ১৭ বছর ও তিনটি ফাইনালে ভগ্ন হৃদয়ে ঘরে ফেরা বেঙ্গালুরু সমর্থকদেরও তাই স্মরণ করলেন তিনি, ‘এই ট্রফি দলের জন্য যতটা, ততটাই সমর্থকদের জন্য। ১৮ বছর পেরিয়ে গেছে এই দিনটা দেখতে। এই দলটাকে নিজের যৌবন, নিজের সেরা সময় এবং অভিজ্ঞতা দিয়েছি। প্রত্যেক মৌসুমে ট্রফি জেতার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, নিজের সবটা দিয়েছি। তাতেও ট্রফি পাইনি। অবশেষে এই দিনটা দেখতে পাওয়া অবিশ্বাস্য এক অনুভূতি।’
জয় পাওয়ার মুহূর্তটা নিয়ে কোহলি বললেন, ‘কখনোই ভাবিনি এই দিনটা দেখতে পারব। তাই শেষ বলটা হওয়ার পর নিজের আবেগ আর সামলাতে পারিনি। নিজের শক্তির প্রত্যেকটা আউন্স এই দলটাকে দিয়েছি।’ লম্বা সময় তার সঙ্গে একসঙ্গে বেঙ্গালুরুর জার্সিতে খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্স। কোহলি তাকেও কৃতিত্ব দিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর, ‘এবিডি এই দলের জন্য যা করেছে তা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। ম্যাচের পর ওকে বলেছিলাম, “এই জয় যতটা আমাদের, ততটাই তোমার। আমি চাই তুমিও আমাদের সঙ্গে উৎসব করো।”’
কয়েক বছর বেঙ্গালুরুতে খেলেছেন আরেক ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ক্রিস গেইলও। ভিলিয়ার্স-দুজনকেই ফাইনাল জয়ের মঞ্চে পেয়েছেন কোহলি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কোহলি সতীর্থদের সঙ্গে সুখস্মৃতি তুলে ধরলেন এভাবে, ‘আমরা তিনজন একসঙ্গে কত বছর এই দলটার সঙ্গে কাটিয়েছি। তিনজনই নিজেদের সেরা সময়টা বেঙ্গালুরুকে দিয়েছি। সেই স্মৃতি কখনও ভোলা যাবে না। তাই আজ ট্রফি জেতার সময়ে সবার আগে ওদের কথাই মাথায় আসছে। আমি ভাগ্যবান যে আজ ওদের পাশে পেয়েছি। চাই এর পর ওরা দলের সঙ্গে বেঙ্গালুরু গিয়ে ট্রফিজয়ের উৎসব করুক।’
সর্বশেষ এলো সহধর্মিনী আনুশকা শর্মার প্রসঙ্গ। যিনি মাঠে থেকে সুসময়-দুঃসময়ে পাশে ছিলেন ভারতীয় তারকার। গতকালও তার চোখেমুখে ছিল অবিশ্বাসী চাহনি। শিরোপা জিতে আনুশকাকে কৃতিত্ব দিয়ে কোহলি বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে বেঙ্গালুরুকে সমর্থন করছে। সে নিজেও বেঙ্গালুরুর মেয়ে। আমাকে সবচেয়ে বেশি কাছ থেকে দেখেছে সে। কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যখন গিয়েছি, যখন ভেঙে পড়েছি, আর কিছুই ভাল লাগেনি, তখন আনুশকাই আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমাকে ভরসা দিয়েছে। নতুন করে উঠে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছে। সহধর্মিনী পাশে না থাকলে এর কিছুই সম্ভব হত না।’