আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতে নারীর বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১ বছর করার প্রস্তাব পাস করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। গত ১৬ ডিসেম্বর ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় এই প্রস্তাব পাস হয়।
এ বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘মেয়েদের অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে, সঠিক বয়সে তাদের বিয়ে হওয়া জরুরি।’
মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত কেউ কেউ সমর্থন করলেও মানতে পারছেন না অনেকেই। এ নিয়ে ভারতে দেখা দিয়েছে বিতর্ক।
অধিকারকর্মী ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) নেত্রী কবিতা কৃষ্ণান বিশ্বাস করেন, নারীর বিয়ের বয়স বাড়ানো সরকারের একটি ‘বড় ধরনের ভুল’ সিদ্ধান্ত এবং এটি ‘সমস্যা তৈরি করবে’।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, শুধু নারী নয়, পুরুষেরও বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ হওয়া উচিত। আপনি যদি ১৮ বছর বয়সে ভোট দেওয়ার অনুমতি পান, তবে আপনি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এবং সেক্ষেত্রে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যেসব অধিকার ভোগ করে তার সবই আপনার থাকা উচিত।’
নারীর বিয়ের বয়স বাড়ানো নিয়ে মোদি সরকারে সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন এআইএমআইএম পার্টি থেকে নির্বাচিত লোকসভা সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসিও। তিনি পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘১৮ বছর বয়সে কোনো মেয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে পারলে সঙ্গী কেন বেছে নিতে পারবেন না।’
ওয়াইসি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দেশে স্বৈরশাসন চলছে। এটি তার ভালো উদাহরণ। ১৮ বছর বয়সে একজন ভারতীয় নাগরিক যে কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারে, ব্যবসা শুরু করতে পারে, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে পারে, কিন্তু বিয়ে নয়।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাতেও ১৪ বছর বয়সে বিয়ে করা যায়। আইনত বিয়ের বয়স বাড়ালেই মেয়েদের উন্নতি হবে— এমনটা মোটেও ঠিক নয়।’
ভারতের সমাজবাদী পার্টির লোকসভা সদস্য ড. সৈয়দ তুফায়েল হাসান সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেন, ‘মেয়েদের প্রজনন সক্ষমতা ১৬-১৭ বছরে শুরু হয়ে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় থাকে ৩০ বছর পর্যন্ত। ১৬ বছর বয়সেই মেয়েদের বিয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু করে। বিয়েতে দেরি করলে দুটো অসুবিধা দেখা দিতে পারে: প্রজনন সক্ষমতা কমে যাওয়া এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে- ছেলেমেয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই মায়ের বার্ধক্যে উপনীত হওয়া। আপনি যখন আপনার জীবনের শেষ দশক বা এমন পরিস্থিতিতে থাকবেন, তখনও দেখবেন আপনার সন্তান পড়াশোনা শেষ করতে পারেনি। আমরা প্রাকৃতিক নিয়ম ভাঙছি।’
রাজনীতিকদের পাশাপাশি ভারতের নারীবাদী ও নারী অধিকার কর্মীরাও মেয়েদের বিয়ের বয়স বাড়ানো নিয়ে মোদি সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। তারা বলছেন, এই পদক্ষেপ ‘নারীর জন্য বিপর্যয়’ ডেকে আনবে।
ভারতের প্রখ্যাত অধিকারকর্মী ও নারী অধিকার বিষয়ক আইনজীবী ফ্লাভিয়া এগনেস বলেন, ‘সরকার যদি ২১ বছর বয়সে আগে হওয়া সব বিয়েকে অবৈধ বলে আখ্যা দেয় তবে তা বিপর্যয় ডেকে আনবে। এমনকি এখনও বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগেই অনেক মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তারা ১৩, ১৪ ও ১৫ বছর বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছে। এখন বিয়ের ন্যূনতম বয়স বাড়িয়ে ২১ বছর করায় তা প্রকৃত অর্থেই বিপর্যয় ডেকে আনবে।’
তবে নারীর বিয়ের বয়স বাড়ানো নিয়ে মোদি সরকারের পদক্ষেপকে সমর্থন করছেন নয়া দিল্লিভিত্তিক সামাজিক গবেষণা কেন্দ্রের (সিএসআর) পরিচালক রঞ্জনা কুমারি। তিনি মনে করেন, নারী-পুরুষ উভয়েরই বিয়ের বয়স একই রকম হওয়া উচিত।
রঞ্জনা কুমারি বলেন, ‘সরকারের পদক্ষেপকে আমি স্বাগত জানাই। এখন সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত সমাজে মানসিকতায় বদল আনতে কাজ করা, কারণ শুধু আইন করেই এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা যাবে না।’
বিষয়টি নিয়ে অধিকারকর্মী ও নারীবাদীদের সমালোচনার জবাবে রঞ্জনা কুমারি বলেন, ‘উগ্র নারীবাদী গ্রুপগুলো শুরু থেকেই’ মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স বাড়ানোর বিপক্ষে কথা বলে আসছে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি না এই পদক্ষেপ কোনো বিপর্যয় ডেকে আনবে। বরং শিশুবিয়ে বন্ধ করার জন্য এটাই সর্বোত্তম উপায়।’
ভারতের সমাজবাদী পার্টির লোকসভা সদস্য ড. সৈয়দ তুফায়েল হাসান সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করলেও একই দলের রাজ্যসভা সদস্য জয়া বচ্চন সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত। এটি মেয়েদের পড়াশোনার আরও বেশি সুযোগ দেবে। তারা তাদের স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারবে। তাদের জন্য আরও ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে।’
সূত্র: এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস ও আল জাজিরা
বিএসডি/ এলএল