প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলছেন ১৮ বছর ধরে। ২০০২-০৩ মৌসুমে অভিষেকের সময় স্বপ্ন দেখতেন, তারাখচিত পাকিস্তানের সবুজ টুপি মাথায় দিয়ে একদিন টেস্ট খেলবেন। লক্ষ্যটাকে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখার চেষ্টায় কোনো কমতি রাখেননি। কিন্তু কেন যেন কখনোই নির্বাচকেরা তাঁকে যোগ্য মনে করেননি। বয়স ৩৬ হয়ে গেছে। এই বয়সে তো অনেকে খেলাই ছেড়ে দেয়। কিন্তু তিনি ছাড়েননি। চেষ্টা করে গেছেন। পরিশ্রম কখনো বিফলে যায় না। ১৮ বছর অপেক্ষার পর তিনি সুযোগ পেলেন টেস্ট খেলার। আর খেলতে নেমেই সাফল্য তাঁর। অভিষেক টেস্টের প্রথম ওভারেই সাফল্য তুলে নিলেন তিনি।
তাবিশ খানের কথাই হচ্ছে। এই মিডিয়াম পেসার কাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে নিজের প্রথম ওভারের শেষ বলে তুলে নেন উইকেট। জিম্বাবুয়ের তারিসাই মুসাকান্দাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তাবিশ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫৯৮টি উইকেট ছিল তাঁর এর আগে। ৫৯৯তম উইকেটটি এল টেস্ট ক্রিকেটে। কালকের দিনটা কীভাবে ভুলবেন তাবিশ?
টেস্ট অভিষেকের আগে টেলিভিশনের জন্য পোজ তাবিশ খানের। এই মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা করেছেন ১৮ বছর।
করাচির এই ক্রিকেটারের জন্ম ১৯৮৪ সালের ১২ ডিসেম্বর। করাচির হয়েই ১৩৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে ফেলেছেন তিনি এরই মধ্যে। লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ ৫৮টি, ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ৪৩টি। লিস্ট ‘এ’তে উইকেট পেয়েছেন ৭৩টি, টি-টোয়েন্টিতে ৪২টি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে গড় ২৪.২৯। লিস্ট ‘এ’ আর ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে যেটি যথাক্রমে ৩২.৯০ ও ২৮.৪২। যেকোনো বোলারই হয়তো বর্তে যাবেন এমন গড় পেলে। এমন এক বোলারকেই টেস্ট টুপি পেতে অপেক্ষা করতে হলো ১৮ বছর।
তাবিশ গতকাল একটি রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন। গত ৭০ বছরে তিনিই টেস্ট অভিষেকের প্রথম ওভারে উইকেট পাওয়া সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটার। এই রেকর্ড এর আগে ছিল জিডব্লিউ চুব নামের এক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারের। তিনি ১৯৫১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪০ বছর বয়সে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে নিয়েছিলেন।
তাবিশের সাফল্য একধরনের উদাহরণই মানছেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান ও তাঁর সতীর্থ আজহার আলী, ‘আমাদের অবশ্য তাবিশ খানের এই কৃতিত্ব উদ্যাপন করা উচিত। সে একটা উদাহরণই তৈরি করল। তার আশাহত না হওয়ার মানসিকতাটাই উদাহরণ। তাবিশ সব সময়ই চেষ্টা করে গেছে, সব সময়ই স্বপ্ন দেখেছে, সে পাকিস্তানের হয়ে খেলবে। পরিশ্রম করে গেছে, পারফর্ম করে গেছে।’
আরও একটি রেকর্ড তাবিশ কাল নিজের করে নিয়েছেন। নিজের অভিষেক টেস্ট উইকেট পাওয়ার আগে এশিয়ার টেস্ট দলগুলোর (ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান হয়ে) তাঁর দখলেই সবচেয়ে বেশি ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির উইকেট (৫৯৮টি)।