আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গত বছর ইরানে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত ৯০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্যে কেবল গত ডিসেম্বরের এক সপ্তাহেই ৪০ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে দেশটি। মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক ইরানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘‘এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক যে, আমরা ইরানে বছরের পর বছর ধরে মৃত্যুদণ্ডের শিকার লোকজনের সংখ্যায় আবারও বৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি।’’ জাতিসংঘের এই মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান বলেন, ২০২৪ সালে ইরানে কমপক্ষে ৯০১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ইরানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি ঠেকানোর এটাই সময়।
ইরানে হত্যা, মাদকপাচার, ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনসহ বড় ধরনের অন্যান্য অপরাধের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের সাজার বিধান রয়েছে। যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, বিশ্বে প্রত্যেক বছর চীনের পর সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে ইরান। যদিও দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্ভরযোগ্য কোনও পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না।
ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও কর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি নেতৃত্বাধীন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সমাজে ভীতি সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে মৃত্যুদণ্ডকে ব্যবহার করার অভিযোগ করেছেন। বিশেষ করে ২০২২-২৩ সালে দেশটিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয় বলেছে, গত বছর বেশিরভাগ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল মাদক সংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে। তবে এই সময়ে ২০২২ সালে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও বিরোধী রাজনীতিকদেরও মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে।
দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নারীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। নরওয়ে-ভিত্তিক ইরানি মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখে। সোমবার এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, ইরানে ২০২৪ সালে কমপক্ষে ৩১ জন নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, ‘‘আমরা যে কোনও পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করি। এই সাজা মানুষের মৌলিক মানবাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং নিরপরাধ মানুষের মৃত্যুদণ্ডের অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকি বাড়ায়।’’
তিনি বলেন, আরও পরিষ্কার করে বলা যায়, ব্যক্তির আচরণের জন্য এই ধরনের সাজা কখনই আরোপ করা যাবে না। যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে সুরক্ষিত আছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ইরানি কর্তৃপক্ষকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে চূড়ান্তভাবে এই সাজা বাতিল করার লক্ষ্যে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহারে স্থগিতাদেশ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সূত্র: এএফপি।