নিজস্ব প্রতিবেদক:
পটুয়াখালীর পায়রা নদীর ওপর সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ২৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াতের পথ খুলে যাবে।
প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-১ ইসমাত মাহমুদা স্বাক্ষরিত চিঠি সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে পায়রা নদীর ওপর পায়রা সেতু উদ্বোধনে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। ২৪ অক্টোবর সকাল ১০টায় গণভবন থেকে তিনি ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
পায়রা সেতু প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, মূল সেতু, সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন শেষ মুহূর্তে সেতু এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে। উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যান চলাচলের জন্য খুলে যাবে এই সেতু। এই সেতুটি উন্মুক্ত হলে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত ফেরিবিহীন যান চলাচল স্থাপিত হবে। পরবর্তী সময়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ হলে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
এই সেতুটি উন্মুক্ত হলে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত ফেরিবিহীন যান চলাচল স্থাপিত হবে। পরবর্তী সময়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ হলে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণার পর এখন পায়রা সেতু এলাকায় সাজ সাজ রব পড়েছে। দৃষ্টিনন্দন এই সেতু দেখতে মানুষের ভিড় পড়ছে। সন্ধ্যায় ঝলমল আলোয় আলোকিত হয়ে উঠছে সেতুটি। একসময় সড়কপথে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা যেতে ১০টি নদীতে ফেরি পারাপার হয়ে যেত হতো। এখনো পদ্মা ও পায়রা—এই দুটি নদীতে ফেরি পারাপার হতে হয়। নদী পারাপারে দীর্ঘ সময় লাগার পাশাপাশি যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। পদ্মা সেতু অচিরেই চালু হবে। পায়রা সেতুটিও উন্মুক্ত হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগে আরেক ধাপ এগোবে দক্ষিণাঞ্চল।
পায়রা সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী এলাকার পায়রা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে পায়রা সেতু। এ সেতু নির্মাণের নকশা কিছুটা ব্যতিক্রমী। চার লেনবিশিষ্ট সেতুটি নির্মিত হচ্ছে ‘এক্সট্রাডোজড কেবল স্টেইড’ প্রযুক্তিতে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতুও এই প্রযুক্তিতে নির্মিত। ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি কেবল (তার) দিয়ে দুই পাশে সংযুক্ত থাকবে। পানির উপরিতল থেকে সেতুটি ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু। উভয় পাড়ে সাত কিলোমিটারজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক। এই সেতুতে ১৩০ মিটার গভীর পাইল বসানো হয়েছে। নদীর মাঝখানে মাত্র একটি পিলার ব্যবহার করা হয়েছে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক থাকবে।
দেশে প্রথমবারের মতো এই সেতুতে ‘ব্রিজ হেলথ মনিটর’ স্থাপিত হচ্ছে। যার ফলে বজ্রপাত, ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই যানবাহন চলাচলে সেতুর ভাইব্রেশন সিস্টেমে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে সেই বিষয়ে সংকেত দেবে। এ ছাড়া সেতুর পিলারের পাশে নিরাপত্তা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। এতে কোনো কিছুর ধাক্কায় সেতুর ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব হবে, বাড়বে সেতুর স্থায়িত্ব। এই সেতুর জন্য আলাদা সাবস্টেশনের মাধ্যমে সেতুতে বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে বাতি জ্বলবে। থাকছে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থাও।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, সরকার ২০১২ সালের মে মাসে সেতু নির্মাণের প্রকল্পে অনুমোদন দেয়। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের যৌথ অর্থায়নে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন সেতুটির নির্মাণকাজ করছে। ২০১৩ সালে ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুটি নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা ছিল এবং ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪১৩ দশমিক ২৮ কোটি টাকা। কিন্তু সেতুর প্রাথমিক নকশায় অনেক পরিবর্তন এনে পরামর্শদাতারা টেন্ডারের নথি প্রস্তুত করে। দরপত্র প্রক্রিয়ায় প্রতিটি পর্যায়ে দাতা সংস্থার সম্মতি নিতে হয়েছে। ফলে নির্মাণকাজ শুরু হতে দেরি হয়ে যায়। এ ছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকল্প ব্যয় একটি ধারণাগত নকশার ভিত্তিতে অনুমান করা হয়েছিল। কিন্তু পরে বিস্তারিত নকশা অনুসারে প্রকৃত নির্মাণ ব্যয় চূড়ান্ত করা হয়। ফলে সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যায়। সর্বশেষ এই সেতুটি নির্মাণে চুক্তিমূল্য ছিল ১ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। তবে সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ১১৮ কোটি। সাশ্রয় হচ্ছে ৫২ কোটি টাকা।
পটুয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান মোহন বলেন, এই সেতুটি দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থা একধাপ এগিয়ে নেবে। কুয়াকাটা, মৎস্য বন্দর, পায়রা বন্দরে যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে স্বপ্নের পায়রা সেতু স্বপ্ন পূরণ করবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের।
বিএসডি / আইকে